"); -->

Sep 30, 2015

সোমনাথ চক্রবর্তী সংকলন – সেপ্টেম্বর

---------------- সোমনাথ চক্রবর্তী সংকলন – সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ----------------


|| পুজোর গন্ধ ||


পুজো আসছে বলে আকাশের দিকে হা পিত্যেস করে তাকিয়ে আছি । কখন ভাসবে সেই পেঁজা তুলোর হালকা মেঘের ভেলা আর অক্ষয় বাবু আসবেন পুজোর চাঁদা নিতে । অক্ষয় বাবুর বাড়ি নারকোল গাছ আর কলাগাছে ঘেরা ঐ দূর গ্রামের প্রান্তে, আমাদের পৃথিবী থেকে একটু দূরে । যেখানে কদিন বাদে কাশফুল ফুটবে অবহেলায় আর পুকুরে ফুটে থাকবে এক আধটা গোলাপি আভার শালুক, নাকি পদ্ম, কে জানে । সেখানে দশ বারো ঘর গরীব লোকের বাস, নিজেরা চাঁদা তুলে আর পরিচিত জনের কাছে কিছু জোগাড় করে পুজো হয় । তিন ফুটের ছেলেখেলার দুগ্গো ঠাকুর । তবে নিষ্ঠা আর উদ্বেল উচ্ছ্বাস কিন্তু একটুও ছেলেখেলার নয় । সেখানেও ঢাক কাঠি পড়ে, শাঁখ বাজে । নবমীতে হয় খিচুড়ি ভোগ আর দশমীতে সিঁদুর খেলা । হয়তো এলইডি আলো নেই কিন্তু মানুষগুলোর মুখ ওই কটা দিন ঝলমল করে মনের আলোয় । মাইক নেই, পরোয়া নেই, ইচ্ছে হলে নিজেরাই নাচে গায়। সন্ধ্যারতির পর শতরঞ্চিতে বসে হারমনি বাজায় আর প্রাণ খুলে গান করে ।

গতবছর দেখে এসেছি পুজোর পর খুশির রেশটুকু ধরে রাখার জন্যে এক অপরূপ আয়োজন । প্রতিমাসে একদিন যে কোনও একজনের বাড়িতে সন্ধ্যায় বসে চায়ের আসর । হয়তো বা সঙ্গে থাকে মনভুলোনো টা । হৈহৈ করে, গায়ে গা লাগিয়ে, ঠেলেঠুলে ঘুরিয়ে দেয় ওরা বছরের চাকা । পলকা দুঃখগুলো যেন আর পাত্তাই পায় না । 

আবার দেখলাম এ্যাম্বুলেন্স ঢোকার মতো রাস্তা নেই বলে ওরা চাঁদা তুলে কিনে রেখেছে একটা স্ট্রেচার । এবারেও যাবো, একবার গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে আসবো কেমন ওখানে খুশির হাওয়ায় হাওয়ায় আমলকীদের ডালে ডালে নাচন লাগে ।

- ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| প্রাসঙ্গিকি ||


আনন্দের উৎস খুঁজতে গুরুদেবের কাছে বসেছিলাম কাল মাঝরাতে । তখন মনে হলো দুঃখ আর আনন্দ যেন একে অপরের পরিপূরক । দুঃখের শেষে আছে যে আনন্দ, সেই তো আমার পরম পাওয়া । নাহলে সে প্রাপ্তির যে কোনও মর্যাদা থাকে না । পিটুলি গোলাতে তো দুধের স্বাদ মেলে না, মনও ভরে না । রচনাবলীর যে অংশটুকু কাল প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছিলো, বহু পঠিত সেই অংশটুকু উদ্ধৃত করার লোভ সামলানো গেল না । 

"জগতের প্রাণের মধ্যে গভীর আনন্দ বিরাজ করিতেছে । সে আনন্দ আলোক কিছুতেই আচ্ছন্ন করিতে পারিতেছে না, বরঞ্চ যতকিছু শোকতাপ সেই দীপ্ত আনন্দে বিলীন হইয়া যাইতেছে । শিবের সহিত জগতের তুলনা হয় । অসীম অন্ধকার দিক বসন পরিয়া ভূতনাথ পশুপতি জগত কোটি কোটি ভূত লইয়া অনন্ত তাণ্ডবে উন্মত্ত । কণ্ঠের মধ্যে বিষ পূর্ণ রহিয়াছে, তবু নৃত্য । বিষধর সর্প তাঁহার অঙ্গের ভূষণ হইয়া রহিয়াছে, তবু নৃত্য । মরণের রঙ্গভূমি শ্মশানের মধ্যে তাঁহার বাস, তবু নৃত্য । মৃত্যু স্বরূপিনী কালী তাঁহার বক্ষের ওপর সর্বদা বিচরণ করিতেছেন, তবু তাঁহার আনন্দের বিরাম নাই । যাহার প্রাণের মধ্যে অমৃত ও আনন্দের অনন্ত প্রস্রবণ, এত হলাহল এত অমঙ্গল তিনিই যদি ধারণা করিতে না পারিবেন তবে আর কে পারিবে । সর্পের ফণা হলাহলের নীল দ্যুতি বাহির হইতে দেখিয়া আমরা শিবকে দুঃখী মনে করিতেছি, কিন্তু তাঁহার জটাজালের মধ্যে প্রচ্ছন্ন চিরস্রোত অমৃতনিস্যন্দিনী পূণ্যভাগিরথীর আনন্দ কল্লোল কি শুনা যাইতেছে না ? নিজের ডমরুধ্বনিতে, নিজের অস্ফুট হর্ষগানে উন্মত্ত হইয়া নিজে যে অবিশ্রাম নৃত্য করিতেছেন, তাহার গভীর কারণ কি দেখিতে পাইতেছি ?

বাহিরের লোকে তাঁহাকে দরিদ্র বলিয়া মনে করে বটে, কিন্তু তাঁহার গৃহের মধ্যে দেখো দেখি, অন্নপূর্ণা চিরদিন অধিষ্ঠান করিতেছেন । আর ঐ যে মলিনতা দেখিতেছ, শ্মশানের ভস্ম দেখিতেছ, মৃত্যুর চিহ্ন দেখিতেছ, ও কেবল উপরে, ঐ শ্মশানভষ্মের মধ্যে আচ্ছন্ন রজতগিরিনিভ চারুচন্দ্রাবতংস অতি সুন্দর অমর বপু দেখিতেছি নাকি ? উনি যে মৃত্যুঞ্জয় !"

- ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| অতিথি ||


বাক্স দেখেই ভিরমি খাচ্চো মিথ্যে তোমার ভয়
তোমার বাড়ি থাকবো দুদিন তার বেশি তো নয়,
ব্যাংকে করি ম্যানেজারি এইতো পরিচয়
বাড়ির পাশেই গঙ্গা দেখছি কুলকুলিয়ে বয় !

নদীর ধারে একলাটি আজ বসবো গভীর রাতে
ঘুমিয়ে পোড়ো বন্ধু তুমি নাইবা গেলে সাথে,
খাবারদাবার সঙ্গে আছে চিন্তা কিছুই নাই
তরল পথে চলবো রাতে জমবে পুরোটাই ।

একটু বেলায় উঠতে পারো কালকে যে রোববার,
খালি হাতেই ফিরতে হবে মনটা পরিষ্কার !

- ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| চলো একদিন ||


ভোরবেলায় ধর্মতলা থেকে ছ্যাকড়াগাড়িতে চলো যাই
পাঁচ ঘন্টায় হটুগঞ্জের হাট ।
খোড়ো চালের চা দোকান, বাঁশপোতা বেঞ্চি
কাঁচের গেলাসে কালচে চা, আঃ...
সাথে থাক লেড়ো বিস্কুট ।
তারপর সারাদিন টোটো কোম্পানি,
থালায় ঢালা মুড়ি, ঘুগনিতে ভয় ? তবে থাক
যদি মুড়িতে নাও কয়েকটা বাতাসা, খাসা !
বিড়ি চলবে ? উল্টোদিকে ফুঁ মারো নয়তো কানে গোঁজো ।

দেখো না কেমন টাটকা সবজি, রকমারি পাখি, 
ডুরেশাড়ি আর টাটকা মানুষ,
যতো দেখবে দুচোখ জুড়োবে, শান্তির জল বৃষ্টিধারার মতো
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে তোমার গায়ে মাথায় ।

মুখোশ হীন বন্ধু পাবে । রোদে পোড়া ক্লান্তিটুকু ধুইয়ে দেবে
কালো দীঘির জল । 
মাটির দাবায় বসে ঠিক দুপুরে, চলবে নাকি পান্তা ?
প্যাঁজ পাবে না, আছে ফুরুলি আর নঙ্কা, 
আর আছে পেট ভর্তি কচি ডাবের জল ।
দিনের শেষে ফিরতি বাসে জানলা দখল ।

এক বন্ধু 'বাবু ', বললে যাবো না,
এসি গাড়িতে ফিষ্টি করবো
মানুষ দেখবো না ।

- ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

।। দিবারাত্রির কাব্য ।।


সকালে বাজার যাওয়া হয়নি কো নানা কাজে আজ
মাছ নেই হাসি নেই অন্ধকার ডাইনিং হল, 
বিকেলে ভাবছি তাই আনতে হবে চিকেন লালিপপ
ঝুমঝুমি হাতে দিয়ে করতে হবে মনটা দখল ।

পকেটের কোণে থাকবে সাবধানে দুটো জেলুসিল
টিভিতে চলবে সুখে সাতরঙা মেগা সিরিয়াল,
এভাবে ঠেকায় সুরে কবিতায় খোঁজা অন্ত্যমিল
বেলঘরিয়াতে যাবে পানসি শুধু ধরে থাকবো হাল ।

যে 'কদিন পাশাপাশি থাকা যায় ভালোবাসা যায়
ঠেকাজোড়া দিয়ে আছি ফাঁক পেলে ভরে দিচ্ছি প্রেম, 
দানাপানি উল্টে ফেলে তুমি ডাকলে ওমনি ফুড়ুৎ
শেষ হবে একঘেয়ে লুডো খেলা জীবনের গেম !

- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| কিছু কথা কিছু ব্যথা ||


পোস্ট আর কমেন্ট দিয়ে বন্ধুদের মনের খুব কাছাকাছি যতো তাড়াতাড়ি আসতে পারা যায়, এমনটি বোধহয় আর কিছুতে নয় । লাইক তো দূরেই থাকে, তার সাথে তেমন লেনাদেনা হয় না । ধরুন কোনও বন্ধুর সাথে হঠাৎ রাস্তায় দেখা হলো । দুজনেই খুব খুশি, প্রাণে খুশির তুফান উঠলো । অনর্গল কথা, গল্প যার বেশির ভাগটাই ভিড়ে হারিয়ে যায় । দমকা হাওয়া এসে উড়িয়ে নিয়ে যায় । চলে যাবার পর খুব মনে হয়, অনেক কথাই যে বলার ছিলো । যেগুলো বলা হয়ে উঠলো না ।

কিন্তু হাতে লেখা দু একটি শব্দ অদ্ভুত কায়দায় মনের ভেতর ঠেলেঠুলে ঢুকে পড়ে, নিজের জায়গা করে নেয়। তার দাবি যেন অনেক বেশি । আমাদের পুরোনো দিনগুলো তো এমনই ছিলো । হলুদ হয়ে যাওয়া কতো চিঠি আমরা বারবার আলতো হাতে খুলে পড়েছি, এখনো পড়ি । মানুষটাকে তখন বুকের বড়ো কাছাকাছি পাই । কাছে না থাকলেও তার জামার গন্ধ নাকে এসে লাগে । আমরা পুলকিত হই !

- ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| চয়নিকা ||


সমরেশ মজুমদার আমার প্রিয় সাহিত্যিক । তাঁর গল্পে উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দ দাশকে চলে ফিরে বেড়াতে দেখেছি । তাঁর একটি সাম্প্রতিক উপন্যাসে ব্যবহৃত কবি সংহিতা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন দিয়ে আজ WaaS এর পাতা সাজালাম ।

ঠাকুরঘর ঠাকুরঘর
বুকের ভেতর ঠাকুরঘর, 
আসতে যেতে দুটো সাঁকো
জোড়া দিলেই ঠাকুরঘর ।

ঠাকুরঘরে যেতে আসতে দুটো সাঁকো কেন ? বলুন না, মনের কথা মুখে বলুন । দুটো সাঁকো জোড়া দেওয়ার ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না । সহজ বলেই কঠিন লাগছে । ধরুন দুটো দিঘি পাশাপাশি, দুটো বলদ একসঙ্গে । কি বলবেন তাদের ? জোড়া দীঘি, জোড়া বলদ । আরে কি কাণ্ড ! এতো সাধারণ মেয়ে নয় ! সাধারণ কবি নয় ||

সংগ্রহ / কৃতজ্ঞতা / কবি সংহিতা চট্টোপাধ্যায় ও সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার ।

- ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

।। কিছু কথা কিছু ব্যথা ।।


মস্তিষ্ক আর হৃদয় । আমাদের শরীরের দুটি যন্ত্রবিশেষ । সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী এই যন্ত্র দুটি মানুষ ছাড়া অন্য কোনও জীবের শরীরে নেই । মস্তিষ্ক হলো জ্ঞান ও মেধার উৎপত্তিস্থল আর হৃদয়ের কমলবনে তো আছে শুধুই প্রেম । মস্তিষ্কে পেশীশক্তির জয়জয়কার । সে শারীরিক অস্তিত্বে বিশ্বাসী যা নিয়ত ক্ষয়শীল । আজ যা নতুন আগামীকাল তা পুরোনো । দিনের ভারে বয়সের চাপে জ্ঞান একসময় বৃদ্ধ হয় কিন্তু হৃদয়ের কথা চিরকালীন আর চিরনবীন, শুধু একান্ত অনুভবের, কখনো পুরোনো হয় না । অশীতিপর দন্তহীন বৃদ্ধের কণ্ঠে প্রেমসংগীত কখনো বেমানান নয় কিন্তু ঐ বৃদ্ধ বয়সের অর্জিত জ্ঞানভাণ্ডার বর্তমানের নিরিখে অচল হয়ে পড়ে । একই শরীরে এই দুই অঙ্গ ঈশ্বর দিয়েছেন, তাই তো আমরা ঘুরেফিরে বেড়াই আনন্দে আর শান্তিতে ।

তেমনি যদি কারও দুটি সন্তান থাকে, একজন মেধাবী, দুরে থাকে । অন্যজন অপেক্ষাকৃত কম মেধার, যে বৃদ্ধ বয়সে বাবা মাকে আগলে রাখে নিজের সন্তানের মতো তাহলে আর সংসারের ছন্দপতন হয় না । কিন্তু যার একমাত্র সন্তান প্রবাসী কিংবা বিবাহসূত্রে ভিনদেশি, বয়স যাদের শারীরিক ক্ষমতা দিনে দিনে কেড়ে নিলেও বুকের রুধির নিংড়ে যাদের এখনো হাসতে হয়, তাদের কি হবে ? মস্তিষ্ক যদি অলস হয় তবু চলে কিন্তু বুকের বাঁদিক অলস হলে তো চলবে না একটুও । তাই বোধহয় রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনকে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে দেখা যায় । এ বয়সে নিঃশর্ত সমর্পণের ভঙ্গি ফুটে ওঠে আমাদেরও দেহে মনে । সমস্ত প্রাণটাকে মুঠোর মধ্যে জড়ো করে এনে তাঁর পায়ে থোবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয় প্রতিদিন প্রতি অনুপল ।

"তোমারি মিলনশয্যা, হে মোর রাজন,
ক্ষুদ্র এ আমার মাঝে অনন্ত আসন
অসীম, বিচিত্র, কান্ত। ওগো বিশ্বভূপ,
দেহে মনে প্রাণে আমি একি অপরূপ ।"

- ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| জলখাবার ||


সকালবেলায় শুনি জলখাবারটা আজ বাইরে খেয়ে নাও ।
ওমনি বুকের মধ্যে গুরগুর করে ছটফটিয়ে উঠলো
খুশির মেঘ, আকাশকে মনে হলো
আরেকটু বেশি বেশি নীল,
পালতোলা মেঘগুলোকে ডেকে বল্লাম
ওগো, একটু দাঁড়াও আমি আসছি ।
চশমাটা পরে নিয়ে, কমল মিত্রর মতো গোমড়া মুখে
আমার বাজখাঁই গলা শুনলাম
বাজারের ব্যাগটা দাও ।

বাইরে বেরিয়ে মনটা প্রজাপতির পাখায় ফুরফুরিয়ে উঠলো,
পাড়ার মাঠে বাঁশ পড়েছে প্যান্ডেলের 
কিশোরীর হাসির মতো মিষ্টি রোদ নেমেছে তেরচা হয়ে
পুকুরের জলে ।

আজ খুব মজা, 
শালপাতার বাটিতে রসগোল্লার মতো গোল খাস্তা কচুরি
দু-দুটো, হাতে গরম ভেতরে খয়েরি পুর, সাথে টকমিষ্টি চাটনি ।
এরসাথে আজ মানিয়ে গেলো
শিউলি ফুলের মতো দুধ-সাদা রূপসী সীতাভোগ,
তার ভেতর নিখুঁতি দিয়ে নিখুঁত সাজানো, তারপর আর কি
বাজারে সঙ্গে গেলো পদ্য
ছুটি নিয়ে বাড়ি গেলো গদ্য ।

- ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------


|| কল্যাণদা কে ||

You have played your innings !

তোমার কথায় এখন হারাধনের সেই দশটি ছেলের কথা মনে আসছে 
কিংবা ধরো আমাদের এগারো জনের ক্রিকেট টিম,
সারা মাঠ জুড়ে থৈথৈ দর্শক
ঘাসে ছড়ানো শীতকালীন ভালোলাগা নরম রোদ,
সুন্দরীর চোখে সানগ্লাস হাতে পেলব কমলালেবু
আমরা সবাই ইউনিফর্ম পরে প্যাভিলিয়নে ।

ক্রিজে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা অনুপম মারকাটারি ছক্কা হাঁকাচ্ছো
হাততালির দুরন্ত ঝড়ে থরোথরো কাঁপছি আমরা,
গ্যালারিতে ফেটে পড়ছে দুরন্ত উল্লাস ।

হঠাৎ দেখি তোমার ইনিংস শেষ ।
শত রানের হিরের মুকুট মাথায় নিয়ে স্বর্গীয় হাসিমুখে
ব্যাট হাতে ফিরে আসছো বা ফিরে যাচ্ছো
কোথায় কে জানে,
পরের জন ক্রিজে !

- ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| দিনের কবিতা ||


ধরিত্রী ও নদীর মতোন তবে
কবিতাও সেই প্রিয় নারী,
সৃষ্টি করে রক্ষা করে তৃষ্ণা করে দূর
মুক্তো হেসে সুক্তো রাঁধে ভরসা ভরপুর ।

আঁচল বিছিয়ে দিলে রৌদ্রদগ্ধ দিনে
প্রিয়পদ যত্নে রাঁধো বাঁধো মুক্ত চুল,
কপালে কুমকুমে আঁকো যত্নে ঘন টিপ
ভালোবাসা ঢেলে দিচ্ছো করছো না তো ভুল ।

কখনো বা দশভুজা নীলকণ্ঠ প্রিয়া
অসুরদলনে রত রক্ষাকর্ত্রী তুমি,
করতলে তুলে নিচ্ছো পৃথিবীর দায়
বাসযোগ্য করে তুলছো প্রিয় জন্মভূমি ।

শ্যাম্পু করা চুল উড়ছে বসন্ত বাতাসে
একটি কন্যার মূল্য অপার অসীম,
পুরুষের ক্লান্তি মোছে শুশ্রূষার হাত
বন্ধ করো ভ্রূণহত্যা মুক্ত করো দিন ।

- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| কিছু কথা কিছু ব্যথা ||


নতুন বাড়িতে টেলিফোন আসেনি তখনো অথচ বাইরে পোস্টিং । ছেলে তখন খুব ছোট, সে আর তার মা একা থাকতো । সন্ধ্যাবেলা অফিস ছুটির পর বন্ধুর বাড়িতে আমার এসটিডি কল ধরতে গিয়ে কুকুরের চিৎকারে ভয়ে কুঁকড়ে যেত আমার ছেলে ।

গতকাল স্কাইপে তাকে পেলাম । অনেকক্ষণ গল্পগাছা করা গেল । ও মাঝে মাঝে বিদেশে থাকাকালীনও স্কাইপে যোগাযোগ করা গেছে । যাই হোক, রাত দশটার পর হঠাৎ খেয়াল হলো টাকা তুলতে ভুলে গেছি । দু'পা দূরে এটিএম, চটিটা পায়ে গলিয়ে ঘুরে এলাম । এমনিতর বিশ্বায়নের হাওয়া লেগেছে আমাদের রাজ্যেও । শহরে গ্রামে গঞ্জে । খুশি মনে রাতের খাবার মুখে তুলতে গিয়ে থমকে গেলাম টিভির খবরে । বাড়িতে বললো দুপুরবেলা প্রচারিত রান্নাঘর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ডাক্তাররা বলেছেন আজকাল এগারো বারো ক্লাসের স্কুল বালিকারাও নাকি যথেচ্ছ ব্যবহার করছে ওসি পিল । এও কি তবে ঐ দামাল হাওয়াতেই উড়ে আসা জঞ্জাল ?

খাবারটা মুখে ঠিক রুচলো না আর । চোখের পাতা ভিজে উঠলো আবার। মনে হলো কোথায় হারিয়ে গেল সেই নানা রঙের দিনগুলি !

- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| শনিবারের বিকেল ||


বাসের জানলায় বসে আছে এক অপরূপা সুন্দরী । তার প্রতিমার মতো মুখ, একঢাল চুল, কমলা রঙের উজ্জ্বল চুড়িদার, নম্র নত চোখ আর ধনুক টানা ভুরু দেখে পেছনের সিটে বসা অমল বাবুর মনে হলো এমন একটি মেয়েকে তাঁর ছেলের বৌ হিসেবে খুব ভালো মানায় । অমল বাবুর রিটায়ারমেন্টের আর মাত্র কয়েকমাস বাকি। একমাত্র ছেলে বছর পাঁচেক হলো চাকরি করছে সরকারি ব্যাংকে ।

এমন মেয়ে পেলে নেতানো ঝিমানো ঘরদোর পলকে আবার চনমনে আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠবে । কিন্তু কি করে ? অপরিচিতাকে কিছু জিজ্ঞাসা করাও তো মোটেই সমীচীন নয় আজকালকার দিনে । ওর সঙ্গে নেমে গিয়ে দেখে আসবেন ওর ঘরবাড়ি ? কিন্তু ও কোথায় যাচ্ছে, কেই বা তা জানে । এইসব সাতপাঁচ ভাবনার মধ্যে কন্ডাক্টর এসে টিকিট চাইলে মেয়েটির কাছে ।

লেডিজ ব্যাগ থেকে পয়সা বার করে টিকিট দিলো মেয়েটি আর তখুনি বেজে উঠলো তার ব্যাগের মধ্যে মোবাইল ফোন । বার করে বললো, আমি এখন খেতে বসেছি, পরে ফোন কোরো । অমল বাবু অবাক, বাসের সিটে বসে ফোনে বলছে খেতে বসেছি, আশ্চর্য ! একটু বাদে আবার ফোন। এবার বোধহয় মেয়েটির মা । কোচিং ক্লাসে আজকে মক টেস্ট হচ্ছে, বিরক্ত কোরো না এখন । কোথায় কোচিং ক্লাস আর কোথায় মক টেস্ট । অমল বাবু থ । লেডিজ সিটে পার্শ্ববর্তিনী বয়স্কা মহিলার ঠোঁটে বিদ্রূপের হাসি । কখনো বা তাঁর চকিত মুখে থমকে থামছে আর ভেসে যাচ্ছে আশঙ্কার কালো মেঘ । এমন মেয়ে তাঁর ঘরেও আছে কিনা কে জানে । জানলার হাওয়া মেয়েটিকে পেরিয়ে এসে উড়িয়ে দিচ্ছে মহিলার কাঁচাপাকা চুল ।

এবার নিজেই ফোন করলো মেয়েটি বোধহয় কোনও বন্ধুকে । একথা সেকথার পর, আমি এখন গড়িয়াহাটে বাটার দোকানে জুতো কিনছি । তোর সঙ্গে পরে কথা বলবো । বাস তখন পেরোচ্ছে বৌবাজার । এমন হবে ছেলের বৌ ? মিথ্যের পাহাড় ।

মুহূর্তে অমল বাবুর মন সম্পূর্ণ বিরূপ হয়ে গেলো । মেয়েটির কোমল সুচারু মুখশ্রী, আনত নয়ন, কোলকাতার ঝলমলে দুপুরে চলন্ত বাসে সেই গ্রেসফুল এ্যাপিয়ারেন্স তাঁর কাছে এখন মূল্যহীন ফালতু বলে মনে হলো । মনে মনে বললেন, না, আমার একমাত্র ছেলের জীবন মিথ্যে দিয়ে শুরু হোক, এ আমি চাই না ।

নির্দিষ্ট স্টপেজ আসার আগেই অমল বাবু বাস থেকে নেমে খোলা হাওয়ায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলেন । কাল রোববার, গিন্নিকে নিয়ে চৌধুরী বাবুর মেয়েকে নাহয় একবার দেখে আসবেন । চাওলার কাছ থেকে হাত বাড়িয়ে নিলেন টলটলে ধোঁয়া ওঠা মাটির ভাঁড় ।

- ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| আজকের সেরা খবর ||


"উন্নত দুনিয়ায় কলের মিস্ত্রি আসেন গাড়ি হাঁকিয়ে । সেখানে এ দেশে আজীবন স্যুট বানানো দর্জি অভাবের কারণে তা গায়েই দেননি কখনো । তাহলে হাত তুললে কোথায় টান পড়বে, তিনি তা বুঝবেন কি ভাবে ? "

মাইন্ড ট্রির ফাউন্ডার আজ বলেছেন দর্জির গায়ে কোট না উঠলে কিকরে বুঝবে সে হাত তুললে কোথায় পড়ছে টান । আমিও তো তাই চাই তার হাভাতে পেটের টান ছুঁচের পেছনে সুতো দিতে দিতে ক্ষয়ে যাওয়া পলকা প্রাণ, ছানি পড়া ঝাপসা চোখে ডাঁটি ভাঙা চশমা, কুঁজো পিঠ সোজা করে একবার সে সটান উঠে দাঁড়াক ।

একদিন তারও গায়ে উঠুক রেমন্ডস এর থ্রি-পিস স্যুট আমি তখন ঠিক আমার বাগানে ফোটা সেরা গোলাপ কুঁড়ি ভালোবেসে গেঁথে দেব তার বাটন হোলে ।

- ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| রোজনামচা ||


একবছর ধরে সমানে লিখে লিখে বন্ধুদের বুকের ভেতর
সাড়ে তিন হাত জমির দখল পেয়েছি
দ্যাখো পূর্বদিকে,
বন্ধুরা জানে ওখানে আমি সবজির চাষ করবো
নাকি গন্ধরাজ ফুলের, 
আমি জানি না ।

আমার লেখায় ওরা চিনে ফেলেছে আমার ঘর গেরস্থালী
হাঁড়িপাতিল আর রোজনামচার গল্পগাছা,
আমার ভাবনা, অনর্গল কথামালা আর বিদ্যের দৌড়,
আমি এসব কিছুই জানি না ।

শুধু জানি লিখতে লিখতে
একদিন চিৎপটাং শুয়ে পড়বো ঐ সাড়ে তিন হাতে
তারপরে নিশিরাতে মুখে বুকে ঝরে পড়বে হিম শিশির, 
ভোরের নীলাকাশ দিগন্তে ফোটাবে
কমলালেবুর মতো মিষ্টি নরম সূর্য
তোমার ঐ কদম গাছের মগডালে বসে তখন 
যতোই ডাকুক ভোরের কোকিল,
আমি আর উঠবো না ।

- ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| মনে মনে ||


আমাদের এই মন যেন ছোটো জিনিসকে বড়ো করে দেখানোর জন্যে তৈরি এক যন্ত্রবিশেষ । দূরত্ব বাড়লে এই যন্ত্রের কাজ আপনি শুরু হয়ে যায় । এতটুকু আমাদের এই শহর, কিন্তু একে ছেড়ে যাও দেখি একবার কোথাও । পৃথিবীর সুন্দরতম দেশে বসেও তখন তোমার মনজুড়ে ভাসবে হাওড়া ব্রিজ থেকে নেতাজী মূর্তি । পুজোর ঢাকের কাঠি বুকের তলায় বেদনার বাদ্যি বাজাবে । এতটুকু এই শহর তোমার সারা মন জুড়ে বিশাল শরীর বিছিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকবে ।

কিংবা তোমার সন্তান বাড়ি ছেড়ে দেশান্তরে গেলেও দেখবে পাঁচতলা বাড়ির প্রতিটি ঘর বারান্দা জুড়ে সারাদিন সারারাত ভেসে বেড়াচ্ছে তার শরীরের মিষ্টি মধুর গন্ধ । যখন বিছানার চাদর তোলো বা আলমারির দরজা খোলো তখন নাকে চোখে মুখে তার উপস্থিতির মৃদু পরশ লাগে । ফেলে যাওয়া গিটারের ধুলোপড়া তার আর কম্পিউটারের কীবোর্ড আলতো আঙুলে ছুঁলে তার হাতের স্পর্শ সবসময় তুমি পাও । তোমার সারা বাড়ি জুড়ে ঝলমল করে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি । ওই তিন হাজার স্কয়ারফিট বাড়ির প্রতি ইঞ্চি ফ্লোর স্পেস জুড়ে থাকে একটি মাত্র মানুষ, তোমার সন্তান ।

নবজাতকের মামার বাড়ি যাওয়ার কথাটাই ধরো । তখন ঐ দোলায় শোয়া একফোঁটা মানুষ, সারা বাড়ি জুড়ে তার হিসি করা কাঁথাকানির গন্ধ, দুধের গন্ধ, তার স্বর্গীয় হাসির স্মৃতি তোমাকে যেন পাগল করে দেয়। আঙুল ছুঁইয়ে দোলাটা দুলিয়ে দিলে সারা বাড়ি যেন দোদুল দোলায় দুলতে থাকে । তার কান্না হাসির মিঠে আওয়াজ তোমাদের যেন পাগল করে তোলে । নিশিপাওয়া উন্মাদের মতো ছুটে যাও মামাবাড়িতে আর কাঁথায় মুড়ে আদরে ফিরিয়ে আনো সেই একরত্তি প্রাণ ।

প্রাণের মানুষ এরকমই প্রাণ জুড়ে থাকে । বিরাট বিশাল অন্তহীন। দূরে গেলে অন্তরে বুঝি, কাছে থাকলে টের পাই না । তবু মণিমুক্তা আগলে রেখে বাঁচা যায় না। মুঠো খুলে যায়, রত্নগুলো আঙুলের ফাঁক দিয়ে মেঝেয় পড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় । কুড়িয়ে নিয়ে পকেটে ভরা যায় না ।

- ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| আগমনী ||


"তিনটি দিনেতে কহলো তারা কুন্তলে
এ দীর্ঘ বিরহ জ্বালা এ মন জুড়াবে ।"
----------------------------------

অদ্রিজার আগমনে আকুল আকাশ
শিউলি ফুটেছে তাই রূপে গন্ধভারে
শরতে শিশিরবিন্দু হেসে উঠলো সুখে
ভোরের রোদ্দুর এসে ভালোবাসছে তারে ।

গণপতি চুপিচুপি মাকে ডেকে কয়
শুধু মোটে তিনটে দিন আরও কেন নয় ?
ময়ূরবাহন যিনি তারও ভারি রাগ
স্কাইপে মেলে না তার প্রেমের আস্বাদ ।

মামাবাড়ি থাকতে পারলে আর কিছু না চাই
বাতানুকূল মেট্রো চড়বো তুলনা তার নাই
আইফোনে সেলফি তোলো মাঞ্জা দিয়ে ঘোরো
আনন্দের পেয়ালাটি যতো ইচ্ছে ভরো ।

সরস্বতী সহমত কার্তিকের সাথে
ডোভার লেনে যেতে চান বীণা নিয়ে হাতে
হামাগুড়ি দিয়ে পেঁচা ইতিউতি চায়
মুখশ্রীটা দেখে সবে হেসে মরে যায় ।

লক্ষ্মী বলে আমি থাকি গৃহস্থের ঘরে
প্রতি সন্ধ্যা পুজো পাই ঘট নাহি নড়ে
চির সখা নারায়ণ সাথে মোর তাই
এ ব্যাপারে মোর জন্য চিন্তা কিছু নাই ।

মহেশ শুনিয়া রেগে উমা পানে কয়
তিনটি দিনের বেশি একটি পল ও নয়
দুয়ারে বসিয়া রবো মুহূর্ত গুনিয়া
যেতে হবে ঘরে, গেলে নবমী চলিয়া ।

মহাসুখে কলকে তে মেরে দীর্ঘ টান
কৈলাসেতে পৌঁছে যাবো শান্ত হবে প্রাণ
নবমীর নিশিরাতে সিদ্দির মালাই
গোটাকয় খেয়ে নেব যদি দেখতে পাই ।

দেরি করে বাড়ি যেতে মোটেও না চাই
নন্দীভৃঙ্গী থাকবে সাথে চিন্তা কিছুই নাই ।

- ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

|| রঙ ওঠা রবিবার ||


আবার একটা সাদামাটা রবিবার এলো আজ । বারের হিসেব আর মনেই থাকেনা । শনিবারের রাত ছিলো তখন রামধনু রঙিন - গেলাসে গোলাপি মদের মতো - কবির ভাষায়, 'with beaded bubbles winking at the brim and purple stained mouth' ।  রবিবারের ভোরের আলো জানলার ফাঁকে উঁকি দিলে আড়মোড়া ভেঙে পাশ ফিরে শোওয়া । যেন কোনও এক সম্রাটের যুদ্ধক্ষেত্রের মতো বিধ্বস্ত বিছানায় বিজয়ী রণ ক্লান্ত শরীরে সুখের মধুর আলসেমি । কেজো সোমবার ছিলো বলেই না রবিবারের এতো রূপ আর উজ্জ্বলতা ছিলো তখন ।

আজ একটু বাদেই উঠতে হবে ছুটতে হবে বাজার । সেই একঘেয়ে কাটা মাছের দরাদরি, আর ভাল্লাগে না ।মটকা মেরে ঘাড় গুঁজে শুয়ে শুয়ে শুনছি আজ দোরে এসেছে মাছওয়ালা । কেনা হচ্ছে ভাঙন মাছ, বাঃ । তাহলে তো ঝোল নয়, ডালনা বা কালিয়া হবে আজ । হালকা খুশির শিরশিরানি গায়ে মেখে ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলুম । যাক, তবু ভালো, ছেঁড়া জালে যা আসে !

- ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------------

।। খোলা চোখে ।।


আজকাল চলচ্চিত্রে ও সিরিয়ালে তথাকথিত স্বামী -স্ত্রী র মধ্যে 'তুই ' সম্বোধনের বেশ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়াছে । কালে কালে কতোই দেখিব । আমাদের সময়ে তো এই ডাক অশিক্ষিত নিম্নশ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো । যেহেতু সাহিত্য শিল্প এবং চলচ্চিত্র সমাজের দর্পণ তাই বর্তমানে সমাজেও এইরূপ সম্বোধন চালু হইয়া গিয়াছে বলিয়া আশঙ্কা হয় । 

বাস্তবে দেখা যায় পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে এইপ্রকার 'তুই ' সম্বোধন করে বটে কিন্তু বিবাহযোগ্য বয়স হইয়া থাকিলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তাহাদের করতলগত হয় নাই । তবে একত্র বসবাস করিবার ও প্রিয় সম্বোধনে ডাক দিবার স্বাধীনতাটুকু কেউ হরণ করিতে পারে না । সুতরাং বিবাহ নামক প্রাচীন গ্রন্থিটির প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ কমিতেছে । পশ্চিমি সভ্যতার যে বিষবৃক্ষটি একদা যত্নে রোপণ করা হইয়াছিল বর্তমান যুবসম্প্রদায় তাহার সুমিষ্ট ফলটি ভোগ করিতেছে ।

আমরা বৃদ্ধের দল ফুচকা ও আলু কাবলির লোভ অতিকষ্টে সংবরণ করিয়া তৃষিত চাতক পাখির মতো গৃহিণীর হাতের সুরভিত চায়ের পেয়ালার অপেক্ষায় যথাসম্ভব দ্রুত পায়ে সান্ধ্য ভ্রমণ সারিয়া নিজ নিজ ঘরে ফিরিতেছি ।

- ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

-------------------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Somnath Chakraborty in WaaS / September 2015

No comments: