"); -->

Oct 1, 2015

সুপ্রভাতের পান-তামোল

|| সুপ্রভাতের পান-তামোল ||


আজকাল যে কোন ফেসবুক গ্রুপের পাতা খুললেই দেখা যায় কয়েকটা "গুড মর্নিং" পোষ্ট । আমাদের WaaS গ্রুপেও রোজ অন্তত: আট-দশটা ওরকম গুড-মর্নিং পোষ্ট দেখা যায় । কখনও চায়ের কাপ, কখনও সুন্দর ফুলের ছবি, কখনও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, শিশুর ছবি ইত্যাদি ইত্যাদি । সকালে ফেসবুক খুলে সুন্দর সুন্দর এই পোষ্ট গুলি দেখে অনেকেরই মন ভরে উঠে । কিন্তু আজ অব্দি সাজানো পানের বাটা দিয়ে স্বাগত জানিয়ে কোন গুড মর্নিং পোষ্ট দেখা যায়নি । 

পান আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । যদিও আজকাল অনেকেই পান খাওয়ার থেকে পান করতে বেশী অভ্যস্ত । আবার অনেকে পান করা বা খাওয়ার চেয়ে pun (শব্দ-কৌতুক) করতে বেশী ভালবাসেন । মিল্টন পাল, উমেশ কুমার দুবে এবং উদয়ন দাসগুপ্ত মহাশয়দের pun-যুক্ত সরস ও ক্ষুরধার কমেন্ট প্রায়ই দেখা যায় । অলোক কুমার চ্যাটার্জি, প্রবীর আচার্য এবং ফিলিপ্স বিশ্বাস মহাশয়েরাও pun  এর ব্যাপারে কোন অংশে পিছিয়ে নেই ।

বাড়ীতে কোন অতিথি এলে ওকে বাটাতে পান সাজিয়ে অভ্যর্থনা করা প্রাচীনকাল থেকেই একটা ঐতিহ্যপূর্ণ প্রথা । বিশেষ করে উত্তর ও পূর্ব ভারতে এর প্রচলন বেশী । বারানসির পান তো বিশ্ববিখ্যাত । বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীদেবীকে পান নিবেদন করা হয় । সংগীত, সাহিত্য, ধর্মগ্রন্থেও পান দিয়ে অভ্যর্থনার / পূজার উল্লেখ পাওয়া যায় ।

আসামে সুপারিকে তামোল বলা হয় । এটি একটি বিশেষ পদ্ধতিতে সুপারিকে জরিয়ে তৈরি করা হয় এবং বেশ কড়া হয় । খাসিয়ারা পান-সুপারিকে কোয়াই বলে । এটি আরও বেশী কড়া । গতমাসে শিলচর গিয়েছিলাম বিশেষ কাজে । সেখানে পানের খুব প্রচলন । ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা প্রায় সবাই পান খেতে অভ্যস্ত । বাড়ীতে কেউ গেলে প্রথমেই পানের বাটা এগিয়ে দেওয়া হয় । যেহেতু অধিকাংশ লোকই বাঙ্গালী, তাই ওখানে পান খাওয়ার পদ্ধতি আমাদের এখানকার বাঙ্গালীদের মতই ।  

অনেকদিন আগে আমি তখন আসামের ডিব্রুগড়ে পোষ্টেড ছিলাম । ওই সময় অফিসে সুশীল দাস নামে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মী ছিলেন । রোজ অফিসে ঢুকে সই করে একটা পান-তামোল তারিয়ে তারিয়ে চিবিয়ে তারপর উনি কাজে বসতেন ।  ডিপার্টমেন্টে তখন শৈলেন এবং মনোজ নামে দু-জন সাব-স্টাফ ছিল । সুশীল দাস সিটে বসেই ওদের যাকে সামনে পেতেন তাকে গুড মর্নিং অভিবাদন করতেন । তারপর সে (শৈলেন কি মনোজ) সোজা নেমে গিয়ে অফিসের কাছেই একটা বাঁধা ধরা দোকান থেকে দুটো পান-তামোল নিয়ে আসত । একটা সুশীল দাসের জন্য এবং আরেকটা তার নিজের জন্য । ওদেরকে দেখলেই দোকানদারও কোন কথা না বলে দুটো পান প্যাকেট করে দিয়ে দিত । 

একদিন সুশীল দাস অফিসে এসে হাজিরা খাতায় সই করে বসে আছেন তামোল-পানের জন্য । অনেকক্ষণ কেটে গেছে কিন্তু কেউই তামোল-পান আনে নি । একটু পরে উনি শৈলেন নামের ছেলেটিকে ডেকে বলেন, "শৈলেন, আজি মই তোমাক গুড মর্নিং দিয়া নাই নেকি ?" “ওহো ! আপুনি মোক গুড মর্নিং দিছে ঠিকেই, মই একদম পাহরি গলুঁ ।" এই বলে ও তখনই বেরিয়ে গিয়ে দুটো তামোল-পান নিয়ে আসে । 

ওই দিন বুঝলাম, গুড-মর্নিং-এর সাথে পানের অন্য একটা অন্তর্নিহিত সম্পর্ক আছে ।

-------------------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Shyamal Kumar Das in WaaS / 01 October 2015

No comments: