।। বাঙালীর দ্বিতীয় আবিষ্কার ।।
অনেকদিন আগেকার কথা । বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ভারতবর্ষে তখন ব্রিটিশ শাসনের সূর্য মধ্যগগণে বিরাজমান ।
দীর্ঘদিন কোলকাতা ভারতবর্ষের রাজধানী থাকার সুবাদে চাকুরী উপলক্ষে বাঙ্গালী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে । এই ভাবে 'কড়ি' বাবুরা আসামের বিভিন্ন প্রান্তে বসতি স্থাপন করে নিজের নামের সাথে সঙ্গতি রেখে গ্রাম / শহর স্থাপন করে সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করেন ।
সেই সময় একবার আসামের তিনসুকিয়ার তিনকড়ি তাঁতি এবং পাঁচগাঁও (পাঁচগ্রাম) এর পাঁচকড়ি পাঁজা তাদের বিশেষ বন্ধু ছয়গাঁও এর ছগনলাল ছাবাড়িয়ার বাড়ীতে আমন্ত্রিত হয়ে বেড়াতে যান । সেখানে ওনারা ক্রমে সাতগাঁও এর সাতকড়ি সাহা, আঠগাঁও এর আটকড়ি আঢ্য এবং নওগাঁও এর নয়কড়ি নাহার সাথে পরিচিত হন এবং সকলে মিলে যৌথ উদ্যোগে দশ দিন ব্যাপী কঠোর গবেষণার পর একাদশ দিনে এক চমকপ্রদ তথ্য আবিষ্কারে সফলতা অর্জন করেন । দ্বাদশ দিনে তৎকালীন চীফ কমিশনার তার উচ্চ প্রশংসা করেন, এবং বাংলার গভর্নরের সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন । ত্রয়োদশ দিনে সর্বসাধারণের উপকারের জন্য নিম্নলিখিত আকারে সেই আবিষ্কার সামাজিক মাধ্যমসমূহে প্রকাশ করা হয় :-
To walk in the morning is good for health.
প্রাতঃ ভ্রমণ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ।
सुबह टहलना सेहत के लिये अच्छा है ।
পরবর্তীকালে, গভর্নর সাহেব কোলকাতার তৎকালীন বঙ্গীয় সুধী সমাজের তিন বিখ্যাত ব্যক্তি, যথাক্রমে খড়গপুরের খগেনচন্দ্র খাসনবীশ, মোমিনপুরের মোহন চন্দ্র মহলানবিশ এবং পাতিপুকুরের পতিতপাবন পত্রনবিস, এর সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেন । ওনারা এর ওপর আরও সুদীর্ঘ গবেষণা করে কিছু সংশোধনী আনয়ন করেন, যেমন :-
To walk in the morning is good for all, but pole vault and gymnastics are not suitable for senior citizens.
প্রাতঃ ভ্রমণ সকলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী । কিন্তু বংশদণ্ড-দ্বারা উল্লম্ফন এবং উচ্চ মার্গের শারীরিক কসরঽ প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক ।
सुबह टहलना सभी के लिये अच्छा है, लेकिन पोल भल्ट और जिमन्यास्टिक्स बरिष्ठ नागरिककों लिये खतरनाक साबित हो सकता है ।
পরে এই সংশোধিত আবিষ্কার American Health Association এর অনুমোদন লাভ করে, এবং সারা বিশ্বে তার দ্রুত প্রসার ঘটে । আইনস্টাইন, হাইজেনবার্গ, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, চার্চিল, রুজভেল্ট, হিটলার, মুসোলিনি, মহারাণী ভিক্টোরিয়া, জাপানের রাজা মিকাডো – এঁরা প্রত্যেকেই এই আবিষ্কারের দ্বারা প্রভূত উপকৃত হন বলে জানা যায় । তবে তাঁরা উল্লম্ফন ইত্যাদি কসরঽ করতেন কিনা সে বিষয়ে বিশদ জানা যায়নি । তাঁরা এবং অন্যান্য দেশের প্রধানগণ তাদের জনসাধারণের প্রাতঃভ্রমণের সুবিধার্থে বিভিন্ন শহরে অসংখ্য পার্ক নির্মাণ করে দেন । ভারতবর্ষেও গান্ধীজী, নেহেরু, সুভাষ বোস, রাজেন্দ্র প্রসাদ, তিলক প্রভৃতি বরেণ্য নেতারা নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ করতেন । রিচার্ড এটেনবরো সাহেবের ‘গান্ধী"’ ছবি থেকে অনুমান করা যায় যে, গান্ধীজী খুব দ্রুত বেগে পাদচারণা করতে সক্ষম ছিলেন ।
অধুনা কোলকাতা এবং ভারতবর্ষের অন্যান্য শহর গুলিতে প্রাতঃভ্রমণ খুবই জনপ্রিয় । আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলেই এর উপকারিতা সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং বিভিন্ন পার্কে তাদের দ্রুত বেগে পদচারণ করতে দেখা যায় ।
আমাদের WaaS Group এর সর্বশ্রী অলোক কুমার চ্যাটার্জি, শিশিরকান্ত মিশ্র, সুদীপ রায় এবং অরবিন্দ ঘোষ মহাশয়ের Group page এ পাঠানো ছবিগুলি দেখে প্রতীয়মান হয় যে ওনারা এর উপকারিতা সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ করে থাকেন । তবে এর মধ্যে কেউ কেউ আবার পদচারণ শেষে গৃহিণীর কঠোর নিষেধ সত্যেও ফুটপাতে অবস্থিত দোকানে গিয়ে গরম সিঙ্গাড়া-জিলাপি ইত্যাদি ভক্ষণ করে থাকেন, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে অণুকুল নয় ।
এই আবিষ্কারের অবশ্যই একটি নেতিবাচক দিকও আছে । শোনা যায়, এরপর লম্ফ এবং শারীরিক কসরত ক্রীড়ার জনপ্রিয়তা বাঙ্গালীর মধ্যে ভীষণ ভাবে কমে যায় । যদিও অধুনা ত্রিপুরা রাজ্যে গুটিকয়েক যুবা শারীরিক কসরতে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন, কিন্তু লম্ফ ক্রীড়ায় আজ অবধি কোন বঙ্গ-সন্তান জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে কোনরূপ দক্ষতা দেখাতে পারে নি । বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানীরা অবশ্য বলেন, বৃহত্তর মানবজাতির স্বার্থের তুলনায় এই ক্ষুদ্র আত্মত্যাগ কিছুই নয় ।
বাঙ্গালীর প্রথম স্বীকৃত আবিষ্কার হচ্ছে জুতা । রবীন্দ্রনাথের "জুতা আবিষ্কার" কবিতায় সেই চমকপ্রদ ঐতিহাসিক কাহিনীর বিস্তৃত বর্ণনা আছে ।
ভাবলে আশ্চর্য লাগে যে হবুচন্দ্র রাজা এবং গবুচন্দ্র মন্ত্রীর জুতা আবিষ্কারের পরে সুদীর্ঘ কালের খরা কাটিয়ে বিংশ শতাব্দীতে বাঙ্গালী আবার নতুন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে ।
তাই দেখে কান্ত কবি গেয়ে গেছেন,"বল বল বল সবে,শত বীণা বেণু রবে, বাঙ্গালী আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে"
-------------------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Shyamal Kumar Das in WaaS / 25 September 2015
No comments:
Post a Comment