"); -->

Sep 9, 2015

নস্যির কাজ

|| নস্যির কাজ ||


আজ যার কথা বলব তাঁকে কী আখ্যা দেবেন আপনারাই ঠিক করবেন ।

তিনি আমার নিকট আত্মীয়, তাই পরিচয় প্রকাশ করা গেল না । তিনি এখনও জীবিত এবং বয়স ৮২ ‘র কিছু বেশি । তিনি জীবনের প্রথম চাকরি করতেন ফিলিপস এন্ড রয় কোম্পানিতে । অফিস ছিল সুকিয়া স্ট্রীট আর কর্নওয়ালিস স্ট্রীটের জংশনে । একদিন অফিসে ঢুকতে গিয়ে দেখেন বিশাল এক ষাঁড় গেট আটকে শুয়ে আছে । অনেক চেষ্টা করেও তাকে নড়ানো গেল না । তাঁর নস্যি নেওয়ার অভ্যাস ছিল । পকেট থেকে নস্যির ডিবে বার করে এক খাবলা নস্যি দিলেন ষাঁড়ের নাকে ঢেলে । ষাঁড়টি প্রথমে তার জিভ দিয়ে নস্যি পরিষ্কার করার চেষ্টা করলো । ততক্ষণে নস্যির কাজ শুরু হয়ে গেছে । ষাঁড়টা ধড়মড় করে উঠে দাঁড়িয়ে ল্যাজটা তুলে ঊর্ধ্বশ্বাসে মাঝরাস্তা দিয়ে দৌড়তে লাগলো, দুপাশের লোক যে যেদিকে পারলো দৌড় লাগাল । একগাল হেসে তিনি অফিসে ঢুকে গেলেন ।

আর একদিন তিনি রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেখলেন তাঁর বাল্যবন্ধু আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে । বন্ধুকে চমকে দেওয়ার জন্য তিনি একটু জোরে হেঁটে পিছন থেকে বন্ধুকে জাপটে ধরে বুকে মাথা গুঁজে হাঁটতে লাগলেন । হঠাৎ তাঁর খেয়াল হল বন্ধুটি কিছুই বলছে না, তখন তিনি হাত ছেড়ে দেখেন অন্য একজন লোক । অপ্রস্তুত হয়ে তিনি বললেন, “স্যরি, আমি না হয় ভুল করেছি, কিন্তু আপনিও তো কিছু বলছিলেন না ?” তিনি একটু হেসে বললেন,”দেখছিলাম আপনি এই ভাবে আর কতদূর যান !”

তাঁর দিদির ভাসুরপোর ছেলের উপনয়ন, তিনিও নিমন্ত্রিত । উপনয়নের দিনই প্রীতিভোজের আয়োজন, কিন্তু তিনি এলেন না । সকলে অবাক, তিনি তো এরকম কখনও করেন না ! তিনি গিয়েছিলেন, তবে সেই দিন নয়, দুদিন পর । কারণ তিনি কার্ডটা পড়েও দেখেননি, ভেবেছিলেন দণ্ডি ভাসানোর পর প্রীতিভোজ, সেই মত স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সহ নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে দেখেন ছাদের ম্যারাপ খোলা । কিছু একটা গণ্ডগোল করে ফেলেছেন বুঝতে পেরে তিনি আর দেরি না করে ওখান থেকে পালিয়ে হোটেলে খেয়ে বাড়ি ফেরেন ।

তাঁর একটি চামড়ার ব্যাগ ছিল, তার মধ্যে ছিলনা এমন কোনও জিনিষ নেই । একদিন তিনি ভাবলেন, ব্যাগটা সত্যি সত্যি অনেক বাজে কাগজে ভর্তি হয়ে গেছে, হাল্কা করা দরকার । সেই মতো দেখে দেখে তিনি পুরনো সব বাজে অদরকারী কাগজ ফেলতে লাগলেন এবং ফেলতে গিয়ে হঠাৎ তাঁর হাতে একটি পোস্টকার্ড উঠে এলো । পোস্টকার্ডটি তাঁরই লেখা তাঁর ভাগ্নিকে, লিখেছিলেন কিন্তু ডাকে দিতে ভুলে গিয়েছিলেন । পরের দিন অফিসে যাওয়ার পথে পোস্টকার্ডটি লেটারবক্সে ফেলে দিলেন । চিঠি পেয়ে ভাগ্নির তো মাথা ঘুরছে, চিঠির যা বিষয়বস্তু সে সবই অনেক পুরনো, তখন তারিখের দিকে তাকিয়ে দেখে সেটি ৬ বছরের পুরনো । মামাকে পরে জিগ্যেস করাতে তিনি বলেছিলেন, “ভাবলাম পয়সা দিয়ে কেনা, ফেলে দেব ? দিলাম তাই পোস্ট করে ।”


--------------------------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Siddhartha Chakraborty in WaaS / 09 September 2015

No comments: