------------------ সোমনাথ চক্রবর্তী সংকলন – অগাস্ট, ২০১৫ ------------------
|| আজকের কবিতা ||
("অল্প লইয়া থাকি তাই মোর যাহা যায় তাহা যায়")ছেলের বৌ আজ রান্না করেছে তার সিগনেচার ডিমের ঝোল
আজ আমাদের টিভি কেনার সেলিব্রেশান ।
আকাশ পরেছে তাই সকাল থেকেই
নতুন রোদের ঝিলমিল শাড়ি,
ছোটছোট টুকরো টুকরো সুখ
আমরা তিনজনে কুড়িয়ে নিচ্ছি এখন ভিক্ষের ঝুলিতে,
দুহাত দিয়ে, যে যার মতো করে লুকিয়ে রাখছি প্রবাসী ছেলের
কাছে না থাকার অনেক বড়ো জমাট দুঃখ ।
সদ্য কাচা জানলার ঐ পর্দাগুলো
হেসে হেসে উড়ে উড়ে কাটিয়ে দিতে চাইছে
ঘনিয়ে ওঠা গুমোট ।
আর একটু পরেই শহর জুড়ে নীল সন্ধ্যে নামবে,
আকাশ পরবে চুমকি বসানো শাড়ি,
আমিও তখন পাঞ্জাবিটা গলিয়ে কিনে আনবো
জিবেগজার মতো বেগুনি আর বাতাসের মতো
হালকা ফুলকা মুড়ি ।
চায়ের কাপে তুফান নয়, চুমুকে জুড়োবে প্রাণ
আজ আমাদের টিভি কেনার সেলিব্রেশান !
- ০৫ অগাস্ট ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
|| দিদিমণির চশমা ||
আমাদের পাড়ার শুভ্রা এখন ইস্কুলের অঙ্কের দিদিমণি,
তার কনকচাঁপা রঙ, দুপুরবেলা কোকিলের সঙ্গে সমানে পাল্লা দেওয়া,
প্রতিমার মতো মুখ, ঝকঝকে দাঁতে চকচকে পেয়ারায় কামড়,
সন্ধেবেলায় উলসে ওঠা রবিঠাকুরের খুচরো গানের কলি,
গীতিকবিতার মতো পাড়ার বাড়িঘর
গাছপালা লোকজন সবাইকে ভূমিকম্পে দুলিয়ে দেওয়া,
ফুরিয়ে গেছে কবে ।
কি করে হলো জানো ?
কোথা থেকে একদিন উড়ে এসে জুড়ে বসলো
আধুনিক গদ্যকবিতার মতো
একজোড়া গম্ভীর দিদিমণি চশমা,
আর সতেন দত্তের ছন্দের মতো হেসে ওঠা
ঝলমলে, ঝাউপাতার মতো পল্লব দেওয়া সেই চোখদুটো
ওমনি বেমালুম ঢেকে দিলে রাতারাতি ।
এখন দশটা না বাজতেই
বেমানান শাড়ি পরে রোজ ধীর পায়ে হেঁটে যায়,
বাড়িটা আফিং খেয়ে ঝিমোতে থাকে সারাটা দুপুর,
পাড়ার মোড়ে চেনা কৃষ্ণচূড়া গাছটা,
কোনোদিন আর ফিরেও তাকায় না ।
- ০৬ অগাস্ট ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
|| রৌদ্রছায়া ||
বর্ষা গেলে এবার ওয়েদারকোট পড়বে বাড়ির গায়ে । শেডকার্ড নিয়ে আজ মিস্ত্রি হাজির । এখন এই সকাল দশটার পর তরুণ অফিস চলে গেলে সুতপার হাত একেবারে খালি । তাই কার্ড নিয়ে বসা গেলো । কিন্তু রঙ পছন্দ করা মোটেই সহজ নয় । কিছুক্ষণ দেখার পর সুতপা বললো, কাল রোববার, তুমি কালকে একবার এসো ভাই । তোমার দাদাও থাকবে, তিনজনে বসে তখন ঠিক করে ফেলবো ।
এখন সে রান্না করবে ভাপা ইলিশ আর নারকোল কুরো মিশিয়ে সুজির পায়েস । আজ শনিবার। তরুণ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরবে। ড্রাইভারকে বলা আছে সন্ধেবেলা গাড়ি বের করার কথা । সাপ্তাহিক কেনাকাটার জন্যে একটু মলে যাওয়া দরকার। সুতপাদের সাজানো সংসার । একমাত্র ছেলে হস্টেলে থাকে। ভরপুর নিটোল জীবনে কোনও দুঃখকষ্ট তেমন নেই ।
অথচ পাশের বাড়িতে দেখো দারিদ্র্যের অমানিশা । মাত্র আট ফুটের ব্যবধান, মাঝখানে পাঁচিল। সংস্কারের অভাবে বাড়িটির ভগ্নদশা । মিনতিদির স্বামী মারা গেছেন বছর দুই হলো । একটিমাত্র মেয়ে মাধ্যমিক দেবে এবার। ওদের একটা কিসের যেন দোকান ছিলো । সেটি বিক্রি করে যে সামান্য টাকা পাওয়া গেছে, তাই পোস্ট অফিসে রেখে সেই সুদ থেকে কোনোরকমে চলে মা মেয়ের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, এমনি তাদের অবস্থা ।
কিন্তু সর্বশক্তিমান কাকে যে কখন কিভাবে কি দেন তা তিনিই জানেন। তাঁর একহাতে বজ্র, অন্য হাতে মোহনবাঁশি । তাঁর অপরূপ শিল্প সৃষ্টি আমরা একজীবনে বুঝে নিতে পারি না, কোনোদিন নিজের অজান্তে নিঃশেষে ফুরিয়ে যাই । আজ রবিবারের সকালে মিঠে রোদ গায়ে মেখে মিনতিদির মা এসেছে । মিনতিদির বাবা ছিলেন রেল কর্মী, উনি তাই সামান্য টাকা উইডো পেনসন পান । ছেলের কাছে থাকেন কিন্তু মাসকাবারে পেনসনের টাকা থেকে মেয়েকে যা পারেন দেন। না হলে যে তাদের দিন চলেনা । শনিবার গেছে মাস পয়লা, আজ সাতসকালে তাই ও বাড়িতে এতো হৈহৈ । হাসতে হাসতে পুজোর বাসন মেজে দিচ্ছে বুড়ি । মা মেয়ে খুশিতে আর আহ্লাদে আটখানা । পুজোর জামা কেমন চাই, দিদার কাছে সেই আবদার পেশ করছে মেয়ে । খুশিতে বাজছে তার রিনরিনে গলা ।
এপারে সুতপার চোখ ছাপানো জল, বুক ভাঙা কান্না । হঠাৎ করে আজ সকালবেলায় হাত পড়ে গেছে বুকের গোপন গভীরে, যেখান থেকে পাঁচবছর আগে এক মারণ রোগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তার মা । এতো ঐশ্বর্য, সুখ আর শান্তি দেখাবার, বুকের কাছে বসে মনের কথা নিজের করে মন দিয়ে শোনবার মতো কেউ আজ আর তার নেই । অর্থহীন বাড়ি ভর্তি আসবাবের মতো নিজেকেও এক প্রাণহীন আসবাব বলে মনে হয় সুতপার ।
ওপর থেকে করুণাময় আজ মুখটিপে হাসছেন আর দেখছেন তাঁর অসাধারণ শিল্পকর্ম। নিজের সৃষ্টির রৌদ্রছায়ার লুকোচুরি খেলায় আর অপূর্ব স্বর্গীয় মহিমায় আজ যেন তিনি নিজেই বিভোর। এই রবিবারের অলস সকালবেলায় ।
- ০৭ অগাস্ট ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
।। তুমি কেমন আছো ।।
ভালোবেসে হাতে দিলে এক কাপ চলকানো চা
ন্যাতানো মারীকে তাই মনে হলো ডার্ক ফ্যান্টাসি,
বাসিমুখ ধুয়ে আসি শুরু হোক আরও এক দিন
পাশে বসি গান শুনি এসো যদি পারি ভালোবাসি ।
প্রতিটি মানুষ ঘোরে নিজস্বীতে দুঃখসুখ ঘিরে
মেলে না কারুর সাথে একা একা বাঁচে শুধু আশা,
রোজ থাকি কান পেতে জীবনের কথা যদি হয়
দুহাতে আগলে রাখি একফোঁটা মায়া ভালোবাসা ।
কেজো কথা ছেঁদো সুরে সাজে নাতো আর সারাদিন
গারদের বাইরে এসে বেঁচে বর্তে টিকে আছি বেশ,
যেখানে ফুটেছে ওই একগুচ্ছ সূর্যমুখী ফুল
তার মুখপানে চেয়ে ধরে রাখি জীবনের রেশ ।
- ১০ অগাস্ট ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
|| দুপুর ||
দুপুরবেলা অফিস পাড়া থাকে জমজমাট । ব্যবসায়িক লেনদেন, টিপে টিপে টাকা গোনা, ফুটপাথের টিফিন, মশলা চা, ঠোঁট রাঙানো পানউলি । লোকালয় ভেঙে যেন জনসমুদ্রের জোয়ার নামে। বাড়িতে মেয়েরা সারাদিনের কাজের শেষে অলস দিবানিদ্রায় বা টিভি সিরিয়ালে মগ্ন । আমি বসেবসে দেখি প্রকৃতির বর্ষাধোয়া শ্যামল রূপ। শান্ত স্থির, গাছদের কথা বলাবলি, দু একটি অবসরপ্রাপ্ত পাখির ক্লান্ত ওড়া উড়ি ।
গতকাল দেখলাম একটি নয়নাভিরাম দৃশ্য । বাড়ির সামনে একটা জায়গায় একটু বৃষ্টির জল জমে আছে । একটি গিরগিটি তার এক পারে বসে অনেকক্ষণ ধরে গভীর চিন্তামগ্ন, কি করে পেরবে এই সমুদ্র । অনেক ভেবেচিন্তে হিসেবনিকেশ করে দিলে এক লাফ এবং অবধারিতভাবেই জলে পড়ে গেল । একটি শালিক পাখিও এক বাড়ির কার্নিশে বসে চুপচাপ একমনে নিরীক্ষণ করছিলো এই সাহসী প্রচেষ্টা । গিরগিটি জলে পড়তেই শালিক ওমনি টুক করে ঠোঁটে তুলে নিলো ওকে । আমি ভাবলাম বুঝি ঠুকরে খাবে । কিন্তু না, ধীরে আলগোছে, কঠিন অধ্যবসায়ে, গিরগিটিকে একটি পাঁচিলের ওপর বসিয়ে দিলে । আমি মনেমনে ওর পিঠ চাপড়ে দিলাম আর বিস্ময়ে দেখলাম এই মহৎ কাজের জন্যে হাতেনাতে একটি পুরষ্কারও সে পেলো, একটি বেশ বড়সড় কেঁচো ।
নিজের দিকে লজ্জায় তাকিয়ে দেখি গোছাতে গোছাতেই যে আমার বেলা গেল । এখন এই বৃদ্ধ বয়সে ঝাপসা চোখে তাই মনে হয়, আরও একবার যদি নতুন করে প্রথম থেকে শুরু করা যেতো ।
- ১২ অগাস্ট ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
|| ছোটো নদী ||
তোমাদের সকলের মতো আমারও বুকের ভেতর
একটা ছোট্ট নদী আছে ।
নিশুতি রাতে সেই জলে উঁকি দিয়ে মুখ দেখে চাঁদ,
পাড়ের গাছ থেকে আনমনে ঝরে পড়ে, ভেসে যায়
ফুল, বেলপাতা, ঠোকরানো পেয়ারা ।
আঁজলা ভরি ঝাপটা দিই মুখে,
শান্তিতে বেঁচে উঠি হেসে উঠি এঁটো করে কান,
হৃদয়েশ্বরী রোজ বুকের ওপর শুয়ে থাকে আলস্যে
নেচে নেচে হেসে চলে যায় ।
আমার শহরও যেন মনে হয় তেমনই পুরুষ
কাঠঠোকরার মতো প্রোমোটার,
পানখোর মাতাল দালাল আর অভাগা বেকার
দিনের জমানো যতো স্বেদ আর ক্লেদ,
ভালোবেসে হাসিমুখে ধুয়ে নিয়ে চলে যায় জাহ্নবীর জল,
এ শহর প্রতিদিন চান করে সেজে ওঠে
দুটি চোখে টেনে দেয় মায়ার কাজল ।
- ১৩ অগাস্ট ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
|| স্মৃতির এ্যালবাম ||
কাল হঠাৎ শ্যামবাজারের মোড়ের কাছে হাতিবাগানে দেখা হয়ে গেলো নন্দর সঙ্গে । নন্দ ছিলো আমাদের বাঁশদ্রোণী ব্রাঞ্চের পিওন । ওকে দেখেছি দুপুরে টিফিনের সময় অনেকের হাত দেখতে । খোলা করতল বাঁ হাতে চেপে ধরে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে খুঁজতো সৌভাগ্যের চিহ্ন । নন্দ ছিলো একজন এক্সসার্ভিসম্যান । রিটায়ার করার বছর দুয়েক আগে একমাত্র ছেলের বিয়েতে আমাদের সকলকে নেমন্তন্ন করেছিলো । দুখানা বড়ো গাড়ি নিয়ে সকলে মিলে নন্দর ছেলের বিয়েতে যাওয়ার সুমধুর স্মৃতি এখনো অমলিন ।
ও ছিলো গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থ। আমাদের খুব যত্ন আত্তি করেছিলো । উঠোনে ধানের গোলা, লাল সিমেন্টের উঁচু দাবা ঘেরা বেশ বড়ো বাড়ি । মৃদু সানাই এর সুর আর ছোট্ট একটুখানি পানপাতা মুখ নতুন বৌ । নন্দর ছেলে, টেরি বাগানো চকচকে হলুদ পাঞ্জাবি পরা বর, নমস্কার করতে এলো । আমি তাকে বলেছিলাম, কিছুটা মুখে, অনেকটাই মনেমনে, ভাআরি সুন্দর বৌ হয়েছে তোমার। ওকে বুকের কাছে যত্নে রেখো, কখনো মাথায় তুলো না । সেই ভিড়ে, হট্টগোলে, আনন্দ কোলাহলে আমার কথাটা হয়তো ভালো করে শোনা যায়নি সেদিন ।
অনেকদিন বাদে নন্দর সঙ্গে আবার দেখা । বুড়ো হয়ে গেছে, ভাঙা গাল, মোটা কাঁচের চশমার ভেতর ঝাপসা চোখ । কি মনে হলো, বললাম এসো নন্দ, একটু চা খাই । ছোট্ট দোকানে চা আর নিমকি বিস্কুট নিয়ে বসলাম ওর পাশে, ও কেমন আছে তাই জানতে । ওর জীবনের গল্প শোনার ব্যাকুল আশায় । নন্দর স্ত্রী গত হয়েছে বেশ কিছুদিন হলো । ছেলের কাছে ও থাকে না এখন। স্বপাক আহার করে আর একা একটা ঘর ভাড়া করে থাকে । কেন ? আমি আকুল হয়ে নন্দর দুঃখকে একটুখানি ছোঁয়ার চেষ্টা করি । হঠাৎ আমার কেন জানি মনে হয়, নন্দ আমার মতো কাউকে আজ খুঁজছে তার চোখের জলের গান শোনাবে বলে ।
নন্দ বললো, আমার কথা আর কি বলবো স্যার, বিয়ের তিন বছরের মাথায় আমার ছেলের একটি পুত্রসন্তান হয় । বাঁধভাঙা আনন্দের উচ্ছ্বাসে সারারাত ছটফট করার পর কাকভোরে চুপিচুপি নন্দ একাই ছোটে প্রসূতি সদনে বংশধরের মুখদর্শন করার জন্যে । আর এজন্যেই দুর্বিনীত ছেলের বিরাগভাজন হয়ে পড়ে । একটু পরে এসে সে বলে, আমার ছেলের মুখ আগে আমি দেখবো, তুমি দেখলে কেন ? ঘর ভর্তি লোকের সামনে এই তীব্র কথায় নন্দর হৃদয় যন্ত্রণায় খানখান হয়ে যায় । আকাশ জুড়ে ঝলসে ওঠে অপমানের বিদ্যুৎ, পায়ের তলায় মাটি সরে যায় । এই বুক ভাঙা যন্ত্রণা সইতে পারে না নন্দ, পরদিনই সস্ত্রীক গৃহত্যাগ করে । আর এই অপরিসীম কষ্ট বুকের ভেতর নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই নন্দর স্ত্রী মারা যায় । অর্থের প্রয়োজন না থাকলেও নন্দ এখন কলেজ ষ্ট্রীটে একটা বই বাঁধাই এর দোকানে কাজ করে ঠেলেঠুলে কাটিয়ে দিচ্ছে দিন ।
বাকরুদ্ধ বজ্রাহত আমি সেদিন সেই গোমড়া মুখো মেঘলা বিকেলে নন্দর যন্ত্রণার ক্ষতে একটু সান্ত্বনার প্রলেপ দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি, কেউ কোনোদিনই বোধহয় তা পারে না ।
- ২০ অগাস্ট ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
|| আজকের কবিতা ||
চারপাশের মানুষজন কমতে কমতে আজ আমরা শুধু দুজন
এতো বড়ো আকাশটা এখন তো শুধুই দুজনের,
বাজারের থলির তলায় অবহেলায় পড়ে থাকে রোজ
সবজি ও মাছ ।
সেই ফাঁকে কখন টুক করে ঢুকে পড়লো ঐ সতীন ফেসবুক ।
অলস দুপুরের সাহিত্যসভা রোজ দুজনের জন্যে,
তার একজন পাঠক আর একজন শ্রোতা
নিবারণ চক্রবর্তী থেকে জয় গোস্বামী,
রুপোলী বিকেল সমরেশ বসু আর সোনালি চা ।
আমাদের দুজনের মোটেই যে আসেনাকো তাস,
তারচেয়ে পড়া ভালো হাসিমুখে ফিলিপ্স বিশ্বাস !
সন্ধ্যায় সিরিয়ালের সঙ্গীরা হৈহৈ করে সেজে গুজে আসে
আর মনভোলানো আলাদীনের গল্প করে ।
বেশি রাতে মোজাইক মেঝের মতো আকাশে
পাতা হয় এত্তোবড়ো রূপোর থালা,
দুজনে দুদিকে বসি এক থালে খেয়ে নিই রাতের খাবার ।
অবশেষে একজন, ধীরে চলে আয়োজন,
কুসুম বিছানো পথ তোমায় পাবার ।
- ২৪ অগাস্ট ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
|| ছড়ার ছররা ||
পিঁয়াজ কিনতে আজ লাগবে যে প্যান কার্ড
ভোরবেলা আকাশকে বলে গেছে লাভবার্ড,
শিক্ষায় রাজনীতি জোর দমে চলছে
প্রেসিডেন্সির তাপে পৃথিবীটা জ্বলছে,
যার আলো ছুঁয়েছিলো গোলোকের প্রান্ত
তারই তাপে অস্থির দুনিয়া অশান্ত ।
ভালো আছে দুধউলি গাই নিয়ে বাড়ি যায়,
বুলু টুতে গান শোনে দেয়ালেতে ঘুঁটে দেয় !
- ২৬ অগাস্ট ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
|| দিনযাপন ||
এইতো আমার মুখ আয়নায় মনের জলছবি
চারপাশের লোকের চোখে ভাসছে তার টলটলে ছায়া,
খিদের ছবি ফুটলো যেই
চলে এলো গরম পরোটা আর সুজি,
সবই বুঝি, সাফল্যের আফটারশেভ, তার ঝিলিক আর সৌরভ,
সকলেই ঠিকঠাক টের পেয়ে যায়
ভোরবেলায় ছাদে একটুকরো নীল আকাশ তখন
হেসে ওঠে, বলে টুউউকি !
দুঃখে ঝোলা চোয়াল আর ঝাপসা পাতা চোখও
সবাই অনায়াসে চিনতে পারে, তখন
বৃষ্টি আসে ঝমঝমিয়ে সোহাগ ভরে মুছিয়ে দিয়ে যায় ।
বিকেলবেলা বিকাশ বাবুর সঙ্গে চটি পায়ে পার্কে বেড়াই, গল্প করি
পাড়ার দুটি হরিণচোখ ভ্রুক্ষেপ না করে হলুদ ওড়না উড়িয়ে চলে গেলে
আমাদেরও গল্প হঠাৎ খেই হারিয়ে থেমে যায়,
ঘনিয়ে ওঠে গোমড়া গুমোট,
বাতাস বন্ধ হয়ে গেলে, চুপচাপ দুজনে একই কথা ভাবি
আমরা হঠাৎ বুড়িয়ে গেছি খুব ।
বাতাস ফুরিয়ে গেলে শুধু দুজনের
দীর্ঘনিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায় !
- ২৯ অগাস্ট ২০১৫
-------------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Somnath Chakraborty in WaaS / August 2015
No comments:
Post a Comment