------------------- সুবীর কুমার দাস সংকলন – অগাস্ট, ২০১৫ -------------------
।। নির্বিকল্প ।।
রোদ থেকে যেই টুপ খ’সে পড়ল গা-জ্বালানো গরম
তোমার ছায়া আমায় দিল সানস্ক্রিনের সৌজন্য
অপমান যতবারই দুচোখে এনে দিল জল
আশ্চর্য সে সবই ভালোবাসার নীল রুমালে গোপন
ভালোবাসার গোটা শরীরে যখন গুটিবসন্তের প্রকোপ
ভালোবাসার গোটা শরীরে যখন হঠাৎ খুব ব্যথা
অনিয়মের দরজায় টোকা মারল বেয়াড়া বিদ্যুৎ
আকাশ ফাটিয়ে চমকালো ধমকালো
তবু কী আশ্চর্য
প্রসব বেদনা ছুঁয়ে কাতর কবিতার শব্দগুলো
নির্বিকার এঁকে ফেলে তোমার মুখচ্ছবি !
তোমারই শরীরে ঢাকে সব যন্ত্রণা !
০৫ অগাস্ট ২০১৫
---------------------------------------------
।। বৃষ্টি ।।
এতদিন ছিল অদেখার অশ্রুপাত
আজ নিয়ম ভেঙেছে
দেখা হবে।
অতএব মেঘলা আকাশ জুড়ে শুরু
নিকেলের মতো চকচকে সব আলো
ও তাদের বৈদ্যুতিক ড্যান্স
এবং কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু যথারীতি বাউণ্ডুলে বৃষ্টি—
যেন চোখের পলকে তৈরি হবে একহাঁটু জল !
আমি ভাবলুম
তুমি আসবে বলেই বুঝি ধোয়া হচ্ছে রাস্তাঘাট,
বাতাসে ভয়ঙ্কর তাসা বাজাচ্ছে ইস্পাত রঙের মেঘ !
অতঃপর তুমি এলে
আর বিরক্তিতে নাক কুঁচকে প্রথমেই বললে—
ইস , মানুষে আজ কখনো বের হয় পথে
এই দারুণ দুর্যোগে
ঝড়-জলে, ছাতা হাতে
কি বিচ্ছিরি বলো সারারাস্তা জুড়ে এই থৈ থৈ জল !
০৮ অগাস্ট ২০১৫
-----------------------------------------------
।। নিশ্চিন্ত করো আমাকে ।।
কথা দাও আছো, থাকবে —
আগামী যত চব্বিশ ঘণ্টা আছে তার
এক সেকেন্ডও তুমি অপরের নও !
এমনকি বলো মৃত্যুর পরেও হাতে হাত ধ’রে
ঘুরে বেড়াব তুমি আমি
এই কলকাতা শহরে,
যেন এক কণা ধুলোও না বলতে পারে
কই , আগে তো কখনো দেখিনি তোমাদের
কবে এলে ?
কথা দাও আছো, থাকবে —
সারাটা জীবন ধরে আমি ছিঁড়ে চুষে খাব তোমাকে
ক্ষুধার্ত পশুর মতো, অথবা যেমন
সরবতি লেবুর রস ভর্তি গেলাসে এক হতচ্ছাড়া মাছি!
কেননা নইলে কিছুই হবার নয়, সব মাটি—
সঙ্গীতের জলসায় কোলাহল
লক্ষবার স্তনে মুখ ঘষেও যে দুঃখ যাবার নয়
এমনই ভয়ংকর, এমনই সাংঘাতিক
সেই ভিখারি রাজার খেলা — ভালোবাসা-বাসি !
১১ অগাস্ট ২০১৫ - (১৯৮৩, ১৬ এপ্রিল । আমি ২৯ ছুঁই ছুঁই ।
‘দেশ’ পত্রিকায় আমার প্রথম এই কবিতাটি ছাপা হয় ।)
----------------------------------------------
।। আত্মশুদ্ধি ।।
শুধু উচ্চারণে নয়, এবার আচরণে এসো
‘করতে হবে, করা উচিত’
এইসব জ্ঞানগর্ভ শুদ্ধাচারের ভাষণ
অনেক হলো
এবার তাহলে শুরু হোক—
অঙ্গীকার যদি করতেই হয়
হোক আয়নার মুখোমুখি
থাপ্পড় যদি মারতেই হয় তো বাড়াও নিজের গাল
শপথবাক্য হোক মিছিল বহির্ভূত
ব্রিগেডে ঢের হলো বি-গ্রেড জনসভা...
উচ্চারণে ঢের হলো, এবার আচরণে হোক
আন্দোলন শুরু হোক ঘরের ভিতর, মনের ভিতর ।
১৭ অগাস্ট ২০১৫
----------------------------------------------
।। ভুল শবাসন ।।
আমাদের কি যেন হবার কথা ছিল
অথচ কি যেন হয়ে গেছে,
মধ্যযামে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে হাজার বছরের
দীর্ঘ খেদ—
ভালোবাসা বুকে নেই, কেউ নেই কোনোখানে...
তবু হৃদয়ের ন্যাড়াছাদে
সেই কবে থেকে যেন আগমার্কা সুরে
বেজে যাচ্ছে
ভুল মানুষের ঠিকঠাক ব্যক্তিগত গান !
চরাচর জুড়ে জমে আছে অন্ধকার ও তারই প্রেত ।
অসময়ে ভেঙে যাবার ভয় হয়ে উঠেছে
পকেটে থাকা রুমালের মতন আত্মীয়, আপন
অথচ ঘাড়-মুখ গুঁজেই এযাবৎ খুঁজে চলেছি তোমাকে
‘তুমি’ নামক সেই জলপ্রপাত, ভালোবাসা, প্রেম
সমগ্র দুপুর জুড়ে আমাদের চৌচির হয়েছে ধ্যান, তবু
নিমজ্জিত হয়ে শুয়ে আছি সকলেই
ভুল এক শবাসনে !
১৯ অগাস্ট ২০১৫
---------------------------------------------
।। ব্যক্তিগত ।।
কাল সারারাত ধ’রে বেজেছে একটা গোপন সানাই
কিশোরী তোমার ছবি এঁকেছে ব্যস্ত একটা
স্বপ্নগন্ধ প্রেম —
দুচোখের শিরা যত আছে আর উপশিরা ছুঁয়ে
মনের গভীরে সে দেখেছে তোমাকে
বিদুষী যত ডালপালা ছিল
সব সরিয়েই সে দেখেছে তোমাকে
নগ্ন খুব নিরাভরণ তুমি
কোনও শিউলি সকাল
হেম অহংকারে ডুবে থাকা এক মৌন নীল মেঘ !
২০ অগাস্ট ২০১৫
--------------------------------------------
।। জ্ঞান-যোগ-বিয়োগ ।।
ভারি সুন্দর তার উপস্থিতি
হট্টগোলের মাঝখানে একা
ভয়হীন,
শান্ত, ও নির্বিকার
খালি গা-য় খেটো ধুতি, মালকোঁচা মারা
কোন দলের হ’য়ে খেলছে দেখে বোঝে কার সাধ্যি
চালচুলোহীন কথাটা তার জন্য
বেশ খাটে
যদিও বিপদের কাজটা এখন যে কি
সে যেন সবটাই তার জানা;
আমরা, যারা পিছুটানে পিছন আটকেছি ফেভিকলে
তাদেরই যত সামনে যাবার তাড়া
মিছিলে ও বক্তৃতায়,
ব্যালকনিতে কফির কাপ হাতে
ভাষণে ও জ্ঞানে
কিন্তু মাঠে নয়
অথচ সেখানেই সে অবিচল মধ্যমণি
বিপদের মাঝখানে,
যদিও আমরাই বলেছি তাকে : বোকা পাঁঠা !
৩০ অগাস্ট ২০১৫
---------------------------------------------------------------------------------
Contributed by Subir Kumar Das in WaaS / August 2015
No comments:
Post a Comment