"); -->

Aug 19, 2015

ভুতের গল্প

|| ভুতের গল্প ||


প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির রাত, নিচ্ছিদ্র অন্ধকার, ঝড় আর বৃষ্টিটা একটানা হয়েই চলেছে । সেই প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া ঘরে ঢুকতে না পেরে ঘরের দরজা-জানালা দিয়ে এক বিজাতিয় আর আতঙ্কিত শব্দ উঠছে । রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে, সময়টাকে নিশুতি রাতই বলা যায় । এই অন্ধকারের মধ্যে নিজে অস্তিত্বটাই কেমন যেন বেমানান মনে হয় । বহু দূরে একটা প্যাঁচা একবার ডেকে উঠেই চুপ করে গেলো । হটাত করে কার যেন ভারি পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলো আর তারপর একটা আর্ত চিৎকার, চিৎকারের পরে আবার সব চুপচাপ । হটাত করে একটা অট্টহাসির আওয়াজ ভেসে এলো, সেই হাসি পৈশাচিক হাসির মতনই তীব্র ।

ভুতের গল্পের এমনটা শুরু হলে বেশ জম্পেশ লাগে । গা শিরশির করে, তারপর কী হোলো, তারপরে কী হোলো ভাবটাই জমিয়ে দেয় গল্পটাকে । আমিও ভাবি এমনই একটা জম্পেশ ভুতের গল্প লিখবো । কিন্তু আমি ভুতের গল্প লিখতে গেলেই সেটা আর জম্পেশ তো হয়ই না, বরং সেটা কেমন যেন হয়ে দাঁড়ায়, নিজেরাই দেখুন ।

আমার গল্পেও ছিল শীতের রাত আর বৃষ্টি, তখন রাত দশটা, ভুতের গল্পের জন্য রাতটা বেশি নয় বটে । কিন্তু বৃষ্টি-বর্ষার জন্য সেই একটু বেশি সন্ধ্যেটাই গভীর রাতের চেহারা নিয়েছে । একাই ছিলাম ফিরছিলাম অফিস থেকে, বৃষ্টিটা অবশ্য শুরু হয়েছিলো সেই সন্ধ্যের থেকেই । খিদিরপুরের সেন্ট থমাস স্কুলের কাছে আসতেই অনেক লোক হাত দেখাল আমার গাড়ীটাকে থামাবার জন্য । কাক ভেজা পুরুষ-মহিলাদের দেখে কষ্ট হলেও সেখানে আমার গাড়ীটাকে থামালাম না, কাকে তুলবো আর কাকেই বা বাদ দেবো । এ ছাড়াও ছিল আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা । একটু এগিয়ে যেখানে এখন মা-লক্ষ্মীর মন্দির হয়েছে সেখানে পৌঁছে দেখলাম এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছেন আকুল নয়নে, মনে হোলো গর্ভবতী ।

তিনি গাড়ীতে বসার পরে জানতে পারলাম, তার গন্তব্য স্থল বেহালা চৌরাস্তায়, অনেক ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, ইত্যাদি । আমার গাড়ীর আয়নায় ওনার মুখটা আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না কারণ তিনি বসেছিলেন গাড়ীর পেছনের সিটের বাঁ দিকের কোন ঘেঁষে । তিনি আমার কাছে জলের বোতলটা চাইলেন, আমি তাকে বললাম আমার কাছে একটা চার-পাউন্ডের কেক আছে সেটির থেকে আপনি একটু খাবেন ? তাকে ব্রীড়ানত মনে হোলো, কোনও উত্তর পেলাম না । কেকটি পিছিয়ে দিলাম, আর একটু পরে মনে হোলো তিনি খাচ্ছেন । মোমিনপুরের সিগনালে গাড়ীটাকে দাঁড় করাতেই হোলো কিন্তু পেছনে ঘুরে তাকে দেখাটা অভদ্রতা বলে মনে হোলো তাই চুপ করেই বসে রইলাম । আমার মাথায় তখন অফিসের কথা, কাল গিয়ে সুইমিংপুল হয়ে যাওয়া অফিসকে কী ভাবে নিজের অফিসে রূপান্তরিত করবো, বাড়ী গিয়ে প্রথমে কনট্রাক্টরকে কী কী নির্দেশ দিতে হবে, এই সব দরকারি কথা ।

বেহালার ট্রাম ডিপো ছাড়িয়ে যাওয়ার পরে তিনি আবার করে জলের বোতলটা চেয়ে নিলেন । এরপরে তার আর কোনও সাড়া শব্দ পেলাম না । আমিও আর কোথাও না দাঁড়িয়ে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে বেশ স্পিডেই গাড়ীটা চালিয়ে নিয়ে এলাম । বেহাল চৌরাস্তায় আসতে আমি পেছন ফিরে বলি এসে গেছে আপনার চৌরাস্তা । ওমা ! কোথায় কী ? কোথায় সেই মহিলা । আমি ভয় পেয়ে গাড়ী থেকে তাড়াতাড়ি নেমে পেছনের দরজা খুলে দেখি, তিনি আবার পড়ে যান নি তো সিটের নিচে । নাহ, তার কোনও পাত্তাই পাওয়া গেলো না । গাড়ীর সিটটাকে দেখে বোঝা গেলো তিনি বেশ আয়েস করেই বসেছিলেন, সেটি বেশ ভিজে আর সেখানে কাঁদা আর কেকের গুঁড়োতে মাখামাখি । আর দেখা গেলো সেই কেকের বাক্সের গায়ে কেকের আইসিং দিয়ে লেখা “থ্যান্ক ইউ” ।

বলুন দেখি এমন ভুতের গল্প কারই বা ভালো লাগে ? আমার তো একদম ভালো লাগে নি ।

---------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Phillips Biswas in WaaS / 19 August 2015

No comments: