------------------ সুবীর কুমার দাস সংকলন – জুলাই, ২০১৫ ------------------------
।। গন্তব্য ।।
নির্ভেজাল স্বপ্নের বিপরীতে দেখা ঘুম-জাগরণে
পাহাড়ে আগুন লাল জলে নীল ঢেউ
ঠিক তখনই
খুঁজতে খুঁজতে তোমার কাছে এসে কী অদ্ভুত
চোখের সামনে হাজির
পৃথিবীর শেষ স্টেশন !
জনমানবহীন শুনশান, কোত্থাও কেউ নেই
এপারেও কিছু নেই, ওপারেও কিছু না
শুধু তুমি জেগে আছ
গোলকধাঁধা হয়ে আছ
সবুজের ইশারা নিয়ে সোঁদা গন্ধ সমেত
অথচ আমি হারাচ্ছি না !
জানি এ জীবনে তুমি আমার কেউ না
না প্রেমিকা না বান্ধবী, না বউ না ঘৃণা —
শুধু হারিয়ে যাবার আগে
ভীষণ বুক ধুকপুক তুমি
তবু ফিরে পাওয়া,
চেনা পথে তুমি মসৃণ প্রতিবিম্ব কোনও
আ-সমুদ্র ফেনা
তুমি বুদবুদ, তুমি রূপের রাতজাগা আলো তুমি
দিক নির্ণয়ের তারা
নির্ভেজাল স্বপ্নের বিপরীতে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে
তোমাকেই পেয়ে যাই হাতের মুঠোয়
জড়িয়ে ধরি পুরুষ হাতে
বালকের মতো,
খোলা তবু অন্ধ চোখে
দেখি রূপের আগুন
কী ভীষণ নগ্ন তুমি চোখের সামনে হাজির
পৃথিবীর শেষ স্টেশন !
০২ জুলাই ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
।। যার যা ভূমিকা ।।
আমার যে কটা ছুরি কাঁচী ব্লেড তলোয়ার
একটারও খাপ নেই অথচ সবকটা ধারালো
নিয়ম করে শান দেওয়া
কোনটা পড়ে আছে টেবিলের ধারে
তো কোনটা ফ্রিজের ওপর
কোনটা ভুল করে বিছানায়
তো কোনটা জানলার পাশে—
এলোমেলো অবস্থান দেখে অনেকেই ভয় পায়
ভাবে কি বেআক্কেলে লোক রে বাবা
বাচ্চারাও তো বাড়িতে আসে
উল্টোপাল্টা যদি কিছু হয়—
মনে হোলো ঠিক, একদম ঠিক কথা
সেইমতো পরের দিন
সবকটা ছুরি কাঁচী ব্লেড পেল ড্রয়ার
তলোয়ার পেল আলমারি
আর আমারই অজান্তে আমার দুই হাত
সোজাসাপ্টা লাল ।
০৫ জুলাই ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
।। মন কেমন কথা ।।
এত কথা জমে আছে শরীরে তুমি কত ছাপবে বলো
ব’সে যাওয়া চোখের কালিতে এক কথা
তো শিরা ওঠা শীর্ণ হাতে আর এক
মুসুম্বি লেবুর গল্পটল্প কিছু নেই
ছাপোষা মানুষের ছাইপাঁশ কথা আছে
সে কি অত ছাপা যায়—
ভালো রাস্তা, পাকা বাড়ী, ঠিকমত রোজগার
ওগুলো সব ভোটের কথা
পাপের গু-মুত
ওসব আমার জন্য নয়,
আমার আছে চাষের কথা, মাটির কথা, মাথার উপর
উড়ে যাওয়া ছাউনির কথা
এছাড়া আর কী বা জানি ?
তবু তো তুমি আমার গ্রাম্য ভাষায় ঢালো
ডাবের জল, মিঠে শাঁস
তুমি কবি, তুমি এসব পারো
তোমার কলমের কালিতে গাছের ছাওয়া
বিশ্রামের ঘুম
তোমার বুকে কবিতার খাতায় এত ভালোবাসা
এত যত্ন
না জানি আরও কত সোহাগ লুকিয়ে রেখেছ
কোথায় কোথায়
আমি চাষাভুষো মানুষ কি কথা কইব বলো
তার চেয়ে তুমি লেখো, তুমি কবি
যা বোঝো, যা পারো
সেই ভালো ।
১৬ জুলাই ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
।। জানাজানি ।।
শরীরে কতটা সুখ ছিল জানা গেল
দুচোখ বেয়ে নেমে আসা চোখের জলে
কেউ দেখেনি, তুমিও না
কেননা তুমিও তখন রতিসুখে আচ্ছন্ন
দৃষ্টিহীন অবস্থায়
শরীরে কতটা বিষ ছিল জানা গেল
তোমার আদুল শরীরের ঘামে
কেউ দেখেনি, তুমিও না
কেননা তুমি তখন ভালোবাসা টপকে
সিঁদুরের সোহাগে
শরীরে কতটা মন ছিল জানা গেল
পরদিন সকালে
বেমালুম অফিস কামাই করে বসে আছে
নতুন বর !
১৮ জুলাই ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
।। টেলিফোনে কথা ।।
টেলিফোনে কথা হয় তোমার আমার
বাস্তবে নিয়মিত নয় কল্পনা তবু প্রতিদিন
কথা হয় অপ্রেমিক বালকের মনখারাপ বিষয়ে
বুক জ্বলে যায়, চোখ ক্ষয়ে যায়, স্মৃতিতে আগুন
তবু কথা হয় টেলিফোনে—
স্বপ্নের যন্ত্রণা যেমন খুবই নিকট অথচ
বহুদূরে
চোখ মেলে দেখে
বিষাক্ত হাওয়ার বিরক্ত ভ্রমণ
ঘরের ভিতর, মনের ভিতর, ঝড়ের গোপন পূর্বাভাসে !
অকস্মাৎ আমার অস্থির
চিৎকার করে জানায় এ সবই প্রচণ্ড ভুল
হাততালি দিয়ে আয়ুর সুগন্ধ সিটি মারে
অলিন্দের কোণে,
প্রতিধ্বনি হেসে উঠে ভেঙে ফেলে সব লুকোচুরি
যত গোপনতা —
ঘুমের ভিতর আচমকা জেগে ওঠে অন্য কেউ
যে আমি নয় অথচ ‘আমি’ আমার মতন
বলে, তোমায় দেখিনি বহুদিন
বহুদিন হোলো সেই আদিম আঢাকা সবকিছু
নিজের চোখকে অবিশ্বাস করার মতন
সুসময়ে
নিঃশ্বাসে নিশ্বাস জড়িয়ে উত্তপ্ত আলিঙ্গনে
বহুদিন দেখিনি তোমায়
অতৃপ্তির অন্ধকার ছিঁড়ে ফেলার মতন
কেঁপে ওঠা আঙুল আর শুকনো ঠোঁটে ।
কেন, কেন এই কথা হয় নির্ভুল বিষয়ে
কেন বুক জ্বলে
কেন চোখ ক্ষয়ে যায়
কেন স্মৃতিতে আগুন
কেন শিল্পের রক্তিম স্বর্গভূমি ছুঁয়ে পতাকা ওড়ায়
কোনও কবির কবিতা না লেখার দুঃখ
কেন তোমার আমার কথা হয় টেলিফোনে
কেন কথা কেন হয় কেন টেলিফোনে ।
২৪ জুলাই ২০১৫
-----------------------------------------------------------------------------------
Contributed by Subir Kumar Das in WaaS / July 2015
No comments:
Post a Comment