|| বৌদ্ধ ধর্মের নির্বেদের কারণ ||
গত ২৮ জুলাই ২০১৫ তারিখে এক নিবন্ধ পোষ্টে আমি আমার বন্ধুদের থেকে জানতে চেয়েছিলাম, তারা বৌদ্ধ ধর্মের নির্বেদের কারণটা কী মনে করেন । এই জানতে চাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল আমার জানার সাথে আরও কিছু যোগ করা । বন্ধুরা অনেকেই তাদের মতামত জানিয়েছেন, আজ আমি আমার জানাগুলিকে জানাবার জন্যই এই পোষ্টটি করলাম ।
ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মে এই ভাঁটার টানটা কবে থেকে শুরু হয়েছে জানিনা, তবে বর্ত্তমানে কলকাতায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দু-একটি মিছিলে ছাড়া বিশেষ ভাবে দেখা যায় না । কেন দেখা যায় না ? কারণ মনে হয়:
১) বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার আর প্রসার লাভ করেছিলো রাজন্য বর্গের পৃষ্ঠপোষকতায়, যেমন কনিষ্ক বা গুপ্ত রাজারা এই ধর্মকে গ্রহণ ও পরিবর্ধন করেছিলেন । বুদ্ধদেব নিজেই রাজপুত্র ছিলেন । পৃথিবীর আর কোনও ধর্মের প্রচারক রাজা বা রাজ পুত্র ছিলেন না ।
২) বৌদ্ধ ধর্মের দর্শন শুনতে যতোই মনোহারী হোক না কেন একটা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে কিছু হিংসা করতেই হয় । কেউ যদি গুম্ফা আক্রমণ করে বিনষ্ট করতে চায় তখন গুম্ফা-বাসিকে তরোয়াল ধারণ করতেই হয় । বৌদ্ধ ধর্মে “অহিংসা পরম ধর্ম”; তাই তারা অস্ত্র ধারণ করেন নি তাদের তক্ষশীলাকে বাঁচাবার জন্য ।
৩) বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে এসে গিয়েছিলো নানান গোষ্ঠী, যেমন হীনযান বা মহাযান, এরপরেও আরও অনেক দল বা উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে নিজেদের দুর্বল করে তুলেছিল নিজেরাই । বৌদ্ধরা তান্ত্রিক হয়ে হিন্দু তান্ত্রিকদের সাথে মিশে যায় । সাধারণের মনে হয় দুটি ধর্ম একই ।
৪) হিন্দু ধর্মের জাত-পাত ছোঁয়াছুঁয়ির মতন সামাজিক বৈষম্যই সাধারণ জনকে আকর্ষণ করেছিলো উদার বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হতে । পরে বৌদ্ধ ধর্মেও তেমনই উঁচু নিচুর ভেদাভেদে দেখে সাধারণ মানুষেরা ইসলামে ঝুঁকে পড়ে ।
৫) হিন্দু ধর্মের মধ্যে ব্রাহ্মণ্য ধর্মটাই প্রধান, সেই ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিলুপ্তপ্রায় দশা থেকে শঙ্করাচার্য ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । হিন্দু বা অন্য ধর্মের বুদ্ধিজীবীরা শঙ্করাচার্যের পাণ্ডিত্যে বিস্মিত হয়েছিলেন ।
৬) গৌতম বুদ্ধকে হিন্দু দশাবতারে স্থান দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মটাকেই হিন্দু ধর্মের একটি শাখায় পরিণত করছিলেন তৎকালীন পণ্ডিত ব্যক্তিরা । যদিও বিষ্ণুর অবতারের সাথে বুদ্ধদেবের “অহিংসা পরম ধর্ম” কথাটা চরিত্র গত ভাবে খাপ খায় না, কারণ অবতার পুরুষেরা “যদা যদা ধর্মস্য গ্লানি ... ” – মানে ধর্মের পুনঃ স্থাপনার জন্য অবতার পুরুষ অস্ত্র ধারণেও বিমুখ ছিলেন না, সেখানে বুদ্ধদেবের অহিংসার বানী কেমন যেন বেমানান । তবে সাধারণের মনে হয় বুদ্ধ ধর্ম আর হিন্দু ধর্ম একই ধর্ম ।
৭) হিন্দু ধর্মের রামায়ণ-মহাভারতের মতন মহান বৌদ্ধ গ্রন্থ না থাকায় গ্রাম ভারতে বুদ্ধ ধর্ম প্রচার পেলেও সেটি বিশেষ ভাবে প্রসার লাভ করতে পারে নি ।
এখানেই শেষ নয়, আরও অনেক অনেক কথা রয়ে গেলো ‘বলিতে’ । বন্ধুদের আমি আবার করে জানাই যে এগুলি সবই আমার নিজস্ব যুক্তি, আর এই যুক্তিতে যদি কারোকে আঘাত দিয়ে থাকি তো, আমি ক্ষমা প্রার্থী ।
------------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Phillips Biswas in WaaS / 31 July 2015
No comments:
Post a Comment