"); -->

Jul 1, 2015

চোর কাহিনী

|| চোর কাহিনী ||


আমাকে একবার চোরের সাথে খানিক ক্ষণ ঘোরাঘুরি করতে হয়েছিলো, অবশ্য তিনি যে চোর ছিলেন সে নিয়ে আমার এখনো সংশয় রয়ে গেছে । সেই গল্পটাই আজ বলি আপনাদের ।

অফিসের কাজ সেরে ফুন্টশিলিং থেকে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেলো, যাবো দালগাঁও, আর “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়” সেটি তো জানা কথাই । আমাদের জীপ গাড়ীটি আমাদের জবাব দিয়ে দিলো, সে আর এক পাও এগুবে না । ভাড়া করা গাড়ী, ড্রাইভারকেও জানি না, তাই মনে মনে ভয় তো ছিলই । রাস্তাও জন মানবহীন । ড্রাইভার জানালো আমরা ফুন্টশিলিং থেকে মাইল পনেরো চলে এসেছি আর দালগাঁওয়ের থেকে এখনো মাইল পঁচিশেক দূরে রয়েছি । সে আরও জানালো, সামনে মাইল খানেক আগে একজন মেকানিক থাকেন, দেখি তাকে ধরা আনা যায় কিনা । এই বলেই সে বেপাত্তা হয়ে গেলো ।

আমি একা একটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে । সেটিকে রাস্তা বলা হচ্ছে এই কারণে যে, সেইখান দিয়েই ফুন্টশিলিং আর দালগাঁওয়ের মধ্যে যাতায়াত হয়ে থাকে । পাহাড়ি রাস্তা, দু-ধারে ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ি ঢাল । তার মাঝ দিয়েই সরু রাস্তা যেটাতে পীচ কখনো ঢালা হয়েছিলো বলে মনেই হয় না । কি আর করি, কিছুক্ষণ জীপে বসে রইলাম, মশারা আমার বসে থাকাটা পছন্দ করলো না । তারা দুষ্টু বাচ্চারা যেমন স্কুলে যাবে না বলে ঘ্যানঘ্যান করে তেমনি করে আমায় ব্যস্ত করে ফেললো । সেই সময়েই বুঝতে পারলাম যে সময়টা বেশ বড়ো হয় । কিছুতেই আর সময় কাটছে না, এদিকে ড্রাইভারও আসছে না ।

এই নরক যন্ত্রণা যে কতক্ষণ ভোগ করেছিলাম সেটি আজ আর মনে নেই । হটাত একটি মনুষ্য কণ্ঠ শুনে চমকে ঘুরে দেখি বছর পঞ্চাশের এক ভদ্রলোক, পোশাক-আশাক দেখে মনে হোলো তিনি বেশ ধনীও । তিনি আমাকে পরিষ্কার বাংলায় জিজ্ঞাসা করলেন, গাড়ী খারাপ হয়ে গেছে নাকি ? আমি ব্যগ্র হয়ে বলি, হ্যাঁ, আর তারপর আমার মনের সব দুঃখ কষ্টগুলি তাকে এক নিশ্বাসেই বলে ফেললাম, মায় আমার যে খিদে আর পিপাসা পেয়েছে সেটিও । তিনি বললেন, আমারও সেই একি অবস্থা । এখানে বসে থাকলে তো চলবে না । চলুন কিছু তো একটা চেষ্টা করতে হবে । আমার মন আবার সেই চেষ্টাটা করে দেখতে রাজী নয়, কারণ তখনো আমার মনে ক্ষীণ আশা ছিল যে আমার ড্রাইভার মেকানিক নিয়ে আসবে । আমার কথাটা শুনে তিনি, মানে সম্রাট-বাবু, বললেন, আরে দাদা দেখুন গিয়ে আপনার মেকানিক এখন কোনও ধেনোর ঘরে ঘুমিয়ে রয়েছে । ধেনো মানে দেশী-মদের দোকান যেখানে সব কিছুই পাওয়া যায় ।

যাক তার কথায় আর আমার অজ্ঞতার জন্য আমি তার সাথে চলতে চলতে এসে পৌঁছলাম একটা লোক বসতির কাছে । দু-তিনটি এক চালা ঘর দেখা গেলো, মনে ভরসা এলো, ছোটো হোক লোকালয় তো বটে । আমরা সেই তিনটি ঘরের থেকে একটি মানুষকেও জাগিয়ে তুলতে পারলাম না । তাদের কোনও সাড়া শব্দই পেলাম না । সম্রাটও রণে ভঙ্গ দিলেন আর আমরা এসে বসলাম একটা গাছের তলায় । লোকালয় থেকে বেশ কিছুটা দূরে । হটাত করে সম্রাট আমার হাতে তার পোশাক গুলি খুলে দিয়ে বললেন কোত্থাও যাবেন না, এখানেই বসে থাকুন । সে তার আন্ডার ওয়ারেই চলে গেলেন । একটু পরেই তিনি রুটি তরকারি নিয়ে এলেন । বললেন, দাঁড়ান জলের ব্যবস্থাটাও করি । তিনি আবার চলে গেলেন, ফিরে এলেন জলের জগ নিয়ে । খাওয়া দাওয়া হোলো । সম্রাট বললেন জলের জগটা আপনি নিয়ে যান রাস্তায় দরকার হবে আর আমি এই থালা গুলি নিয়ে যাচ্ছি । ভাবলাম, থালাগুলি তিনি ফেরত দিতে নিয়ে যাচ্ছেন ।

আমি সেখানেই বসে বসে বুঝি বা একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম, হটাত কিছুর শব্দে আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো আর দেখি আমার ড্রাইভার আমাকে ডাকছে, গাড়ী ঠিক হয়ে গেছে ।

দালগাঁওয়ের দিকে চলতে চলতে ড্রাইভার বলল, আপনার বুদ্ধিটা ভালো হয়েছিলো, আপনি যে সামনের দিকে এগিয়েছেন সেটি কাগজে লিখে রেখে এসেছিলেন, না হলে তো আমি মনে করতাম যে আপনাকে চিতা বাঘেই টেনে নিয়ে গেছে । আমি ঘাবড়ে গিয়ে বলি, সে কি এখানে বাঘ আছে আর তুমি আমাকে একা রেখে চলে গিয়েছিলে ? ড্রাইভার বলে, স্যর তারা কি আর রোজ রোজ বের হয় নাকি । আর গাড়ীটাও তো ঠিক করাবার ছিল ।

যাই হোক আমি আমার নৈশ অভিযানটির কথা বলতেই সে আর সাথের মেকানিকটি একদম চুপ হয়ে গেলো । মেকানিকটি এতক্ষণ আমাদের কথার মাঝে মাঝে তাল দিয়ে যাচ্ছিলো, হ্যাঁ স্যর, বা নানা স্যর বলে ।

আরও মাইল দশেক যাওয়ার পরে ড্রাইভার বলে স্যর আপনি ... আপনি কিনা সম্রাটের দলে যোগ দিলেন ? আমি ওর কথাটা বুঝতে পারি না । ড্রাইভারই আমাকে জানায় যে, সম্রাট হোলো এই এলাকার ত্রাস, সে চোর-ডাকাত-বদমাশ । আপনি তার সাথে যোগ দিয়ে চুরি করলেন? আবার তার ভাগও নিলেন এই জগটা ।

আমি তাড়াতাড়ি করে জলের জগটা ফেলে দিলাম জীপের বাইরে ।

----------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Phillips Biswas in WaaS / 01 July 2015

No comments: