"); -->

Jun 21, 2015

আজ ফাদার্স ডে


|| আজ ফাদার্স ডে ||


বাবার কথা মনে পড়ে গেলো । বাবা অনেকদিন পরলোক গমন করেছেন । সেই ১৯৯২ সালে, ৮৬ বছর বয়েসে । সত্যি কথা বলতে কি আমার বাবা আমাকে আমার সব ভাই-বোনের থেকে বেশী ভালোবাসতেন । কিন্তু আমার মা আবার আমার দাদাকে বেশী ভালোবাসতেন । যাই হোক আজ ফাদার্স ডে । তাই বাবার কথাই মনে করি । জানেন বাবার চলে যাবার কাছাকাছি বছরগুলো বাবাকে খুব মনে পড়তো । কিন্তু সেই স্মৃতি যেন আসতে আসতে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে ।
অতিরঞ্জিত নয়, বাবার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে । তখন আমার কতই বা বয়েস হবে । ক্লাস সেভেন-এ পড়ি । ও একটা কথা বলা হয়নি । আমার বাবার ছিল খুব আত্মসম্মান বোধ ।

আমাদের গ্রামে তখন দুদিন হাট বসত । একটা দিন ছিল রবিবার, আর একটা দিনের কথা আমার মনে নেই । আন্দাজে বলে লাভ নেই ।

এমনি এক হাটবারে আমি বাবার সাথে হাটে গেছি । বাবা আগে আগে, আমি পিছনে । আমার হাতে বেশ কয়েকটা ব্যাগ । কারণ তিন-চার দিনের সব কিছু কিনে রাখতে হবে । হাটে ঢোকার মুখে একটা গোরুর গাড়ি করে এক গাড়ি শতরঞ্জি বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে এক তাঁতই । গোরু দুটিকে দূরে ফাঁকা জায়গায় বেঁধে সে বসে আছে শতরঞ্জি নিয়ে । বাবা গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কিরে, কত করে দিচ্ছিস? বাবার হাঁটুর উপর আটহাতি ধুতি আর গায়ে খাটো ফতুয়া দেখে বোধ হয় তাঁতির পছন্দ হয়নি । তাই সে মুখ ঘুরিয়ে চুপ করে বসে থাকে । বাবা এবার ধমকের সুরে বলেন, কিরে কথাটা কি কানে গেল না । তাঁতি এবার উল্টো দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার কেনার ক্ষমতা নেই । এই কথা বাবার আত্মসম্মানে লাগলো । বললেন, এই সামনের চৌধুরী পাড়ায় আমার বাড়ি । তোর গাড়ির সব শতরঞ্জিগুলো আমার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবি, কত নিবি তাই বল! এইবার লোকটা থতমত খেয়ে বাবার দিকে তাকায় । কোঁত পেড়ে বলে পাঁচশো টাকা হলেই চলবে বাবু । বাবা ফতুয়ার পকেট থেকে একমুঠো টাকা বের করে লোকটার হাতে দিয়ে বলে, পাঁচশো গুনে নিয়ে বাকীটা ফেরত দে ।

সেদিন বাজারের বদলে এক গাড়ি শতরঞ্জি দেখে মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন । অবশ্য তারপরে আবার বাবাকে হাটে আসতে হয়েছিল । কিন্তু আমি আর বাবার সাথে আসি নি । আমি তখন শতরঞ্জি নিয়ে মত্ত ।

সেবার পুজোয় সেই সব শতরঞ্জি গরীব অনাথদের দান করে দেওয়া হয়েছিল... ।

------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Aloke Chowdhury in WaaS / 21 June 2015

No comments: