"); -->

May 23, 2015

নাটকের সংলাপ

|| নাটকের সংলাপ ||


(স্মৃতির ঝুলি থেকে কয়েকটা সুখ-দুঃখের ঘটনা আপনাদের সঙ্গে ফেসবুকে সহভাগ করে দেখলাম অনেকেই সেগুলো পছন্দ করেছেন, আবার সুন্দর সুন্দর মন্তব্যও করেছেন । তাই সাহস করে আর একটা ঘটনার কথা বলি । প্রথমেই বলে রাখি, যেহেতু এটা গল্প নয় সত্যি ঘটনা, তাই মূল চরিত্রের নাম পালটে দিলাম স্বাভাবিক কারনেই ।)

সময়টা ৭০ দশকের প্রথম দিক । পুজো সবে শেষ হয়েছে ক’দিন আগেই । বেলার দিকে আমার বন্ধু সজলের গলা, “একটু নিচে আয়, দরকার আছে।”নেমে দেখি সজলের সঙ্গে পাশের পাড়ার লম্বুদা (কাল্পনিক নাম) ।আমাকে দেখেই আমার হাত চেপে ধরে বললেন, “প্লিজ বাঁচা আমাদের, আজ বিকেলে দেশবন্ধু পার্কে আমাদের নাটক । যে অমিতের রোল করছিল তার ধূম জ্বর, তোর তো পার্টটা পুরো মুখস্ত, করে দে ভাই আমার ।” মাস তিনেক আগেই আমরা ঐ নাটকটা মঞ্চস্থ করেছি, শৈলেশ গুহ নিয়োগীর ‘কলেজ হোস্টেল’ । লম্বুদা বলল, “দুপুরে একবার চলে আয় আমাদের বাড়ি, একবার ফাইনাল রিহার্সাল দিয়ে নেব ।”


গেলাম দুপুরে, সঙ্গে আমার সব সময়ের সাথী সজল । গিয়ে দেখি একটা গদিওয়ালা চেয়ারে এক বয়স্ক ভদ্রলোক বসে আছেন, আর লম্বুদা তাঁকে খুব খাতির করে চলেছে । আমাকে দেখে লম্বুদা বলল, “মেসোমশাই, তোর বাবার রোলটা করবেন”। সজল আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলল, “চিনিস ওঁকে ? স্বপ্নাদির (এটাও কাল্পনিক নাম) বাবা ।“ লম্বুদার স্পেশাল খাতিরের কারণটা বোঝা গেল – তখন লম্বুদার সঙ্গে স্বপ্নাদির জোর প্রেম ।

নাটক শুরু হল ঠিক সময়ে । অমিত (আমি) কলেজ হোস্টেলে থাকা বড়লোক বাপের বখে যাওয়া ছেলে । একটা দৃশ্যতে অমিত তার বাবার কাছে টাকা চাইবে । মেসোমশাই গ্যাঁট হয়ে একটা চেয়ারে বসে আছেন । হটাত মনে হল কালো পর্দার পেছনে কেউ নড়াচড়া করছে । তারপর আচমকাই সেখান থেকে ফিসফিস কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, “মেসোমশাই, মানিব্যাগ নিয়েছেন তো ?”, লম্বুদার গলা । ব্যাস, মেসোমশাই এদিকওদিক তাকিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে উত্তর-কোলকাতার বৈশিষ্ট্যের টানে বলে উঠলেন, “হ্যাঁ,হ্যাঁ ... নিয়িচি ।”

আমার তখন পায়ের তলার মাটি কাঁপছে । প্রথমে দর্শকরা কিছু বুঝতে পারেনি, ভেবেছিল নাটকেরই সংলাপ, তারপর যখন ব্যাপারটা বুঝতে পারল, হাসির একটা ঢেউ আছড়ে পড়ল গোটা মাঠে । মেসোমশাই নির্বিকার, উইংসের পাশে স্বপ্নাদির করুণ মুখ । নাটক শেষ হতে দেখি লম্বুদা মঞ্চের পিছনে মাথায় হাত দিয়ে বসে, পাশে স্বপ্নাদি সান্ত্বনা দিচ্ছে বোধহয় ।

আর দাঁড়ানো উচিৎ হবে না বুঝতে পেরে বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম ।

------------------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Siddhartha Chakraborty in WaaS / 23 May 2015

No comments: