|| এঁচোড়ের ডালনা ||
অনেক দিনই স্ত্রী কে বলেছি যে খুব ইচ্ছে করে, মা যে রকম তৈরি করতেন সেইরকম, ঘি গরম মশলা দিয়ে রাঁধা এঁচোড়ের ডালনা খেতে, আর উনিও তৎক্ষণাৎ উত্তর দিয়েছেন, "এনে দিলেই করে দেবো ।"
কিন্তু বিশ্বাস করুন (সত্যি অবিশ্বাস্য) বিগত চার দশকে এঁচোড় আর কিনে আনতে পারিনি, তাই তার ডালনাও খাওয়া হয়ে ওঠে নি ।
যাই আনি সেটা কাঁঠাল হয় বটে কিন্তু এঁচোড়, নৈব নৈবচ ।
কি আর করা, মনের দুঃখ মনে নিয়েই হয়তো বৈতরণীর ওপারে চলে যেতাম, যদি না হঠাৎ এক অভাবনীয় ভাবে কপালটা খুলে যেত ।
কাল সকালে আড্ডা মারতে বি-এফ ব্লকের শৈলজা বাবুর (ডাক নাম আবার অলোক) বাড়ী পৌঁছনো মাত্রই ওনার স্ত্রী ওই বিশেষ ফলটিকে সামনের সেন্টার টেবিলের ওপরে ধপ করে রেখে বললেন, "দাদা এঁচোড় খাবেন, নিয়ে যান ।", এরকম অপ্রত্যাশিত ভাবে ওটিকে সামনে দেখে মনে ফুলঝুরি ফুটতে লাগলেও একটু সামলে নিয়ে বললাম, "এতো বিশাল বড় দেখি, মনে হয় কাঁঠাল ।" । উনি বলে উঠলেন, "না না দাদা, এটা সত্যিই এঁচোড় ।" । আমি বললাম, “তা অত বড়ো যখন, পুরোটাই আমায় দিয়ে দিচ্ছেন কেন ?” অল্প ইতস্তত করে বলেই ফেললেন, "ওটা কাটা আর রাঁধা আমার দ্বারা সম্ভব নয় ।"
যাই হোক, চা খাওয়ার পর ওটা একটা থলিতে বন্ধ করে সেই থলি বাইকের সাইডের হুকে ঝুলিয়ে তো বাড়ী পৌঁছলাম । কোনও ক্রমে সাহস সঞ্চয় করে গিন্নির সামনে ওটাকে প্রস্তুত করা মাত্র ওঁর মুখটা কিরকম যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো । আবার শুনতে হোলো, " ওটাকে কাটা আমার দ্বারা সম্ভব নয় ... কেটে দাও, রেঁধে দিচ্ছি ।" কী ভাগ্য যে একবার ঝোঁকের মাথায় ফ্যান্সি মার্কেট থেকে একটা চপার কিনে এনেছিলাম । সেটাকে এঁচোড় বধের কাজে লাগালাম (কারুর কারুর মনে থাকতে পারে, ওটা দিয়েই গোটা সেই ভেটকি মাছটাও কেটেছিলাম) । কিন্তু অর্ধেক করা মাত্র একেবারে গলগল করে সাদা আঠালো দুধ বেরিয়ে, দুহাতে লেগে, চটচট করে একাকার । আমাকে বাধ্য হয়ে পশ্চাদপসরণ করতে হলো । আমার "গুড লাক" ভালো বলুন, বা মায়ের আশীর্বাদ, ঠিক সেই মুহূর্তেই দরজার বেল বাজিয়ে কাজের মেয়ে তাপসীর আগমন ঘটলো । বললাম, "তাপসী, এঁচোড়টা নিয়ে যাও ।" আর ডগার দিকের অর্ধেকটা ওকে দিয়ে মিনতি করে বললাম, “কিন্তু আমাদের দিকের আধাটা একটু কেটে দিয়ে যেও ।”
যাই হোক, টু কাট এ লং স্টোরি শর্ট, তাপসী সেটাকে জানিনা কোনও টেকনিকে তো কুচি কুচি করে কেটে দিল । কিন্তু তাতেও কি রেহাই আছে, গিন্নি জানালেন, "ঘি তো আর খাওয়া হয়না । তাই বাড়ীতে ঘি নেই, ঘি এনে দাও, আর নাহয় বলো তো সর্ষে বা সাদা তেল দিয়ে করে দিই ।" কিন্তু তা কি হয় ? একছুটে লাবনী, লোকাল মার্কেট থেকে ঝর্না ঘিয়ের ছোটো প্লাস্টিক এর শিশি নিয়ে ফিরলাম ।
দি রেস্ট ইজ 'হিস্টোরি' ।
পুনশ্চ: পেল্লায় সাইজ হওয়া সত্যেও এঁচোড়টি খুবই নরম, বীচি-বিহীন ও সুস্বাদু ছিল, আর গিন্নির হাতের রান্না এখনো যুত করে খাওয়ার মতো ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Aloke Kumar Chatterjee in WaaS / 20 May 2015
No comments:
Post a Comment