|| উত্তর ||
ঊমাশঙ্করের ‘হিমালয়ের পথে পথে’ আমাকে আকৃষ্ট করেছিল । পরের দিকে শহর ছেড়ে পাহাড়ে ভ্রমণের দিকে নজর পড়ে । ‘বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনা’ বইটা হিমালয়ে ট্র্যাকিঙে উদ্বুদ্ধ করে । সহধর্মিণীকে একই নেশা ধরালাম । আর কোন বাধা রইল না হিমালয়ের কোনে কোনে ঢুঁ মারার ।
বন্ধুরা প্রায়শই বলেন এত খরচা করে কষ্ট করতে যাওয়ার কী দরকার । বলি, প্রকৃতি সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয় । তাঁরা ইউরোপ আমেরিকা ঘুরে এসে বিবরণ দেন তাঁদের আনন্দের । আমি তিব্বত চীন সীমান্তে মানস ভ্রমণ করে কষ্টের কৈলাস ট্র্যাকিং এর ছবি দেখানোয় তাঁরা কৈলাস পতির উদ্দেশে প্রণাম জানিয়ে একই অনুযোগ করেন আর আমাকে হিমালয়ের ঐ উচ্চতায় কষ্ট ভ্রমণ থেকে বিরত করেন । আমার মুখে কোন উত্তর থাকে না আমি কেন বৈভবপূর্ন শহর দেখতে অভ্যস্ত হলাম না । আজকে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় তে প্রকাশিত একটা গল্প খুব মন কাড়ল । গল্পটা এইরকম ।
বছর কয়েক আগে বন্ধুরা মিলে অন্নপূর্ণা বেস-ক্যাম্পে ট্রেক করতে গিয়েছি । টোলকা থেকে তিন হাজার সিঁড়ি উতরাই ভেঙ্গে সমতলের তিন কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে আবার তিন হাজার সিঁড়ি চড়াই লান্ডুক পৌঁছে দেখা মিলল এক আইরিশ দম্পতির । প্রায় ছয় হাজার ফুট উচ্চতায় জনমানবহীন পাহাড়ে ভদ্রমহিলা তাঁর সন্তানের জন্ম দিয়েছেন । কোনও ডাক্তার-নার্স ছাড়াই ঐ নির্জন স্থানে তিনি মা হয়েছেন । সদ্য-মা তাঁর বাচ্চাটিকে পরিষ্কার করছেন । আলাপ হল ভদ্রলোকের সাথে । বললেন তাঁরা তাঁদের বাচ্চাটিকে এভাবে পৃথিবীর আলো দেখানোর জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন । আমি শুধু ভাবলাম ভদ্রমহিলার মানসিক জোরের কথা, আর বারে বারে তাকাচ্ছিলাম ফেলে আসা কষ্টকর রাস্তার দিকে ।
আমার প্রাতঃভ্রমণের সেই সব বন্ধুরা সেদিন আমাকে যে প্রশ্ন করে হিমালয় ট্রেকিং থেকে বিরত করতে চেয়েছিলেন এই গল্প থেকে তার উত্তর পেয়ে যাবেন ।
--------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by Dilip Kumar Sen in WaaS / 10 May 2015
No comments:
Post a Comment