"); -->

Mar 31, 2015

সোমনাথ চক্রবর্তী সংকলন – মার্চ


------------- সোমনাথ চক্রবর্তী সংকলন – মার্চ, ২০১৫ --------------



|| লজ্জা ||


বাড়িতে ভালো কিছু রান্না হলেই ছোটো বাটি করে রেখে দেওয়া হয় আমাদের কাজের লোকের জন্যে । পরশু রাতে হয়েছিলো পাতলা সুজির মিষ্টি পায়েস । মিল্কমেড নারকেল কুরো দেওয়া কিসমিস ছড়ানো ।

একটু বেলায় আকাশটা যখন রুটি সেঁকা তাওয়ার মতো একটু একটু করে অনেকটা তেতে উঠলো তখন ও এলো কাজ করতে । বাসন মাজা ঘর মোছা শেষ করে ডাইনিং হলের মেঝেতে বসে জলখাবার খেতে খেতে ওর গল্প হাওয়ায় ভেসে আসে আমার কানে । ওর বর ভ্যান চালায় আর রাতে এসে ওকে খুব মারধোর করে । ও বলে …
'জানো বৌদি, আমার মারে খুব ভয় '
প্রশ্ন - 'তা কালকে কি হয়েছিল ? মারল কেন তোকে ?'

আসলে আমাদের পাড়ায় একজন নতুন বাড়ি করেছে । বাড়িতে থাকে না, কেয়ারটেকার বসিয়ে চলে গেছে । কেয়ারটেকার ভদ্রলোক বৌ বাচ্চা নিয়ে থাকে । সেই বাড়িতে ও নতুন কাজ নিয়েছে । ওর বর বলেছে ......
'চাকরের বাড়ি ঝি গিরি করছিস তুই ? তোর লজ্জা করে না ? '

আমি শুনি । উঁকি দিয়ে দেখি রুটি দিয়ে পায়েস খাওয়া শুকনো মুখ । ঝলমলে রোদ চারদিক আলো করে তখন নির্লজ্জের মতো লুটিয়ে আছে আমার বারান্দায় ।।
- ০২ মার্চ, ২০১৫


|| ফাগুন-মেয়ে ||


ফুল সেজেছিল রঙে আর রূপে গন্ধভারে
বাতাস বহিছে মন্দমধুর সিন্ধু পারে,
একটু দেরিতে আকাশ পেতেছে রূপোলী থালা
তারারা ঘুমল সারারাত ধরে গল্প করে ।।

পাখির সুরেতে নিদ্রা টুটেয়ে প্রভাতবেলা
নদীও চলেছে কথাকলি নেচে কে জানে কোথায়,
ফাগুন সেজেছে নীরবে যতনে কৃষ্ণচূড়ায়
আবীর গুলেছে আকাশে বাতাস মায়াবী খেলা ।।

তুমি এলে যেই রানীর মতন মুখে আধো লাজ
বিদিশার নিশা কেশভার খুলে দাঁড়ালে আবার,
কারুকাজ মুখ, নীড়ে ফেরা চোখ মেলেছ তোমার
তুমি না এলে যে পূর্ণ হবে না ফাগুনের সাজ ।। 

- ০৪ মার্চ, ২০১৫

|| আজ দোল ||


নিধুবনে একলা আছে ও পাড়ার ওই শ্যামল
রিংটোনেতে মধুর সুরে বাজছে বাঁশি তার,
সোনার মেয়ে রাইকিশোরী আর কোরো না দেরি
মিস কলেতে জানান দিলে মান কোরো না আর ।

নূপুর রেখে জিন্স পরেছ চুল রেখেছ খোলা
বাহারি টপ, চিকন সোনা কণ্ঠে দোদুল দোলা,
পিচকিরিতে ভরছ খুশি ভালোবাসার গান
উড়িয়ে দিলে রঙিন আবীর ভরিয়ে দিও প্রাণ ।।

- ০৫ মার্চ, ২০১৫


|| জীবনের গান ||


গোমড়া মুখে সকাল থেকে বিকেলবেলা হাসি
সন্ধ্যাবেলা চাঁদ উঠেছে দিচ্ছে হামাগুড়ি,
মাদুর পেতে ছাদের ওপর মাখছ তুমি মুড়ি
খুশির সুরে পড়ছে গলে জ্যোৎস্না রাশি রাশি ।

মনে করো গনগনে রোদ কালকে দুপুরবেলা
দুঃখগুলো ঘিরছে যখন কঠিন কষাঘাতে, 
এমনি করে নিপুণ হাতে নিজের মতো করে 
যত্ন করে মাংসকষা পড়লো এসে পাতে ।

সোনার বরণ ফুলকো লুচি একটু বেশি রাতে, 
ছোলার ডালে জমবে ভালো বেগুনভাজা সাথে ।

পদ্মপাতা জলের ফোঁটা একটুখানি প্রাণ,
আসবো ফিরে তোমায় ঘিরে গাইবো চেনা গান ।।

- ০৭ মার্চ, ২০১৫

|| সিংহাসন সরে গেলে রাজ্যপাট ||


আমাদের ব্যাংকের জোনাল ম্যানেজার ছিলেন ক-সাহেব । তাঁর দাপটে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত । নিন্দুকেরা ওমনি বলবে, সরকারি অফিসে তা আবার হয় নাকি ! আরে হয় হয় । ক -সাহেব যে সত্যি সত্যিই সাহেব। সরকারি আর বেসরকারি, তাতে কিছু এসে যায় না তাঁর । নিজের টার্গেট নিজেই সেট করতেন আর সবসময় সেটা থাকতো হেড অফিসের দেওয়া টার্গেটের থেকে ওপরে । সেখানে পৌছতে গিয়ে একেবারে গ্রাস-রুট লেভেলে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এমনকি গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন । তাদের সুখদুঃখকে নিজের মতো করে দেখতেন ।
অসহায় মুসলমান বিধবার বহু টাকার ডিসিস্ড ক্লেম সেটলমেন্টের করে দিলেন মুহূর্তে রাত আটটায় ব্রাঞ্চে বসে । বেকার ছেলের সততা মুখ  দেখে অনায়াসে কিভাবে যেন পড়ে নিতে পারতেন । সকলের শেষে অফিস ছাড়ার আগে দেখে নিতেন আলো পাখা জলের কল সব ঘরে বন্ধ আছে কিনা । একবার এক ধু ধু গ্রামে ম্যানেজার-বাবু জনহীন ব্রাঞ্চ একটু তাড়াতাড়ি বন্ধ করে স্টেশনে এসে দেখেন ক-সাহেব ট্রেন থেকে নামছেন । ব্যাস, পড়ি কি মরি করে ছুটে গিয়ে ব্রাঞ্চ খুলে বসলেন । যদিও ক -সাহেব আর আসেন নি ।
কিন্তু মুকুট রাজ্যপাট তো আর চিরদিন থাকে না । অবসরের দিন চোখের জলে ঘনিয়ে এলো বিদায় । গজদন্ত মিনার থেকে নেমে এলেন রাজপথে জনস্রোতে । অবসরের পর সারাদিন নাকি কানে প্লাগ লাগিয়ে এফএম শোনেন । তখন টাকা তোলার জন্যে পেতলের গোল চাকতি বা টোকেন দেওয়া হতো । একদিন ব্রাঞ্চে অন্যান্য গ্রাহকদের সঙ্গে বেঞ্চে বসে টোকেন পকেটে কানে প্লাগ লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন । ব্রাঞ্চ ম্যানেজার থেকে শুরু করে কনিষ্ঠ কেরানি কেউই তেমন পাত্তা দিলো না আর  । অত সময়ই যে নেই কারো। একজন গ্রাহক একটু ঠেলে জাগিয়ে দিলেন বোধ হয় । কাউন্টারে নতুন ছেলেটি বলল, কোথায় ছিলেন দাদা এতক্ষণ ?
ক-সাহেব কাঁপা আঙ্গুলে নীরবে ধীরে টাকাগুলো গুনে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। রোদে, জনবহুল রাস্তায় । এই ই তো হয়, সিংহাসন সরে গেলে রাজ্যপাটও যায় । রাজমহিষীও বোধহয় তেমন করে খোঁজ রাখে না আর !

- ১১ মার্চ, ২০১৫

|| প্রেম নেই ||


গড়িয়াহাটের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছেলেটি
চিৎকার করে ডাকল ...মিলি...ই..ই....
সারা পৃথিবী তখন তাকিয়ে দেখল মেয়েটিকে,
কালো লেগিংস আর হলুদ পাঞ্জাবি পরা
যার হাওয়ায় ওড়া খুচরো চুল আর 
সদ্য ফোটা সূর্যমুখী মুখ,
বাস থেকে যে নেমেছে এইমাত্র
যখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামছে শহরে
আর সামনে গাড়িঘোড়ার দীর্ঘ মিছিল,
বাস, ট্যাক্সি, প্রাইভেট-কার অটো
তেড়েফুঁড়ে সব ছুটে আসছে একসাথে
রাস্তা পেরোতে দিচ্ছে না ।

তখন আঙুলে ওড়না জড়িয়ে পাশ কাটিয়ে
এপারে চলে এলো সেই মেয়ে
আর অধীর ছেলেটির সাথে ছন্দে পা মেলাল । 
ওর প্রেম, এই ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর ছিনিমিনি খেলা
সম্ভবত এটাই শেষতম ।

মা যে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে সামনের মাসেই
প্রবাসী চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, রঙিন প্যাকেজ, 
গল্পগুলো তাই তাড়াতাড়ি শেষ করে উল্টে মুড়ে রেখে
নায়িকা মিলি এবার আকাশ বেয়ে দুহাত ছড়িয়ে ডানা মেলবে
উধাও নতুন জীবনের দিকে । 

পেছনে পড়ে থাকবে এই আলো আঁধারি প্রেমের শহর
যে শহর দুহাত ভরে উজাড় করে শুধু দিলো,
পেলো না কোনও কিছুই !

- ১২ মার্চ, ২০১৫

|| প্রার্থনা ||


আগের চেয়ে নিবিড় করে কেন যে কাছে আসছ না
তবে কি আর আগের মতো আমায় ভালো বাসছ না ?
ভুলে যাওয়া মোটেই ভালো নয়
তোমার আকাশ সেই কথাটি কয়, 
অস্তরবি আসন ছেড়ে গেলে
চাঁদের হাসি পূর্ণ করে রয় ।

তোমার কাজে নেই তো অবহেলা
ফুলের হাসি পাখির কলতান,
ভালোবাসা একটুখানি দিও
সেই সুবাসে ধন্য হবে প্রাণ ।

তোমার দেওয়া কর্ম যদি শেষ
তবু যে কেন বাজছে তারি রেশ,
নিকানো ঘরে আসন হোলো পাতা
নয়নজলে চরণে রাখি মাথা
তবুও কেন করুণা মাখা হাতটি তুলে ডাকছ না, 
তবে কি আর আগের মতো আমায় ভালো বাসছ না ?

- ১৭ মার্চ, ২০১৫

|| কবিতার পাঠক ||


কবিতার পাঠক চিরকালই দেখো খুব কম । কিন্তু পাঠকে কবিতে ভারি ভাব । কবিতার বই যেন সেই মুখচোরা কিশোরী, যে নির্মেদ শরীর নিয়ে তাকের কোনে চুপচাপ শুয়ে থাকে । যেন কোনও ছাইচাপা রত্ন । 

এখন যদি গাদাগুচ্ছির পাঠক ভনভন করতো তবে সেটা আর কবিতা না হয়ে বরং হয়ে উঠত পাকা কাঁঠালের মতো বটতলার হট-সেলার । তা সেই পাঁজরাভাঙা উড়নচণ্ডী জনাকয়েক পাঠক ঘাসের ঘ্রাণ অনায়াসে কয়েক গেলাস পান করে ঘাসের ওপর শুয়ে শুয়ে দ্যাখে, আর ঠিক চিনে নিতে পারে যে চিল উড়ে উড়ে কাঁদছে সে পুরুষ না নারী । ঠিকঠাক দেখতে পায় তার শিশির-ভেজা চোখ ।

তারপর উঠে ধীর পায়ে সেই কিশোরীর কাছে চলে যায়, যার চোখ বেতের ফলের মতো ম্লান। পকেট থেকে টাকা বের করে চুপচাপ বইটি কিনে নিয়ে বাড়ি চলে যায় । বুকের নিচে রেখে সারারাত মশারির মধ্যে শুয়ে থাকে। যে মশারি আবার মাঝরাতে হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে চলে যায় নক্ষত্রের দিকে ।

এইভাবে প্রতিদিন পাঠকে কবিতে মিলে গলাগলি করে হাজার বছর ধরে পথ হেঁটে যায় । আর, একই কবিতা বারবার ফিরে ফিরে পড়তে পড়তে প্রতিবার তার মানে বদলে যায় । দুজনের পৃথিবীতে তখন আর কেউ কোত্থাও থাকে না !

- ১৮ মার্চ, ২০১৫


|| হিরের ফুল ||


প্রথম ম্যারেজ এ্যানিভার্সারির সাতনরি হার
মাথার টিকলি থেকে পায়ের নূপুর
আর মণি রত্নের সোনাদানার হিসেব
সব রইলো লকারে,
এই নাও তার চাবি ।

ব্যাংকের এফডি এমআইএস জীবনবীমার পলিসি
সব ধরা আছে এই ফাইলে, দেখে নাও ।
এই ঘরদোর বুকের পাঁজর গুঁড়ো করা ইট
রক্ত দিয়ে নিপুণ গাঁথা দেওয়াল,
ধোয়ামোছা শ্বেতপাথরের মেঝে, সব থাকবে, থাক ! 

কানেকানে বলছি এবার শোনো
দেবার বেলা বাদ রাখিনি কোনও,
দিয়েছি তো উজাড় করে যখন যেটা চাইলে
ভালোবাসার হিরের ফুল রাখবো কোন ফাইলে ?

- ১৯ মার্চ, ২০১৫


|| দাম্পত্য ||


রবিবারের ভোরে
শালিকের ঝগড়ার তালে তালে
শুরু হোলো পাশের বাড়ির অমল ও দীপার
ধুন্ধুমার কাজিয়া ।

বাসনপত্র ছোঁড়াছুড়ির খানখান আওয়াজ
মুড়ে রাখা হোলো তাই অসহায় শেষের কবিতা 
লাবণ্যর সঙ্গে এতো বেলায় বনল আর মোটেই,
ঝনঝনিয়ে ভাঙল বুঝি জানলার ঐ কাঁচ

সকাল থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে
চলল শুধুই অসন্তোষের ঝড়।
আমরা দুজন নিরুপায় ওষ্ঠাগত প্রাণ
শুধুই মোবাইলের গান শুনছি,
ঝড়ের দাপট যে মোটেই কমছে না ।
শ্রীমতী তখন বলল, একটু বৃষ্টি হলে ঠাণ্ডা হয় !

সন্ধ্যে রাতে খুব বৃষ্টি হোলো
মেঘের আবরণ গেল ছিঁড়ে
আর গভীর রাতের একলা মেয়ে চাঁদ
ওদের জানলায় উঁকি দিতে গিয়ে
খুচরো মেঘের ওড়না উড়িয়ে, মুচকি হেসে
একছুটে পালিয়ে গেল লজ্জায় !

এসে গেলো ওদের সোমবারের কেজো সকাল
দোরে তালা বাইক আলগোছে কাঁধে হাত
নেল-পালিশে চিকন রোদ ।

- ২০ মার্চ, ২০১৫


|| পাকা চোর ||


পুজোর দিনে কিশোর বেলায় ঠাকুর দেখতে গিয়ে
প্যান্ডেলেতে পড়লো চোখে সোনার মতো মেয়ে,
শিশির ঢালা দুচোখ যেন পানের পাতা মুখ 
চুলের ঢালে ঝরনা নাচে দেখলে মনে সুখ ।

হরিণ চোখে দেখছ ফিরে কেউ করেনি ফলো
দুই কানে দুই ঝুমকোলতা আলোয় ঝলমলও,
রূপের ছটা উলে পড়ে চক্ষে লাগে ঘোর,
কানের সোনা সামলে রাখো ভাবছ পাকা চোর !

দুল নেবো না মনটি নেবো বুঝলে ওগো মেয়ে,
ভ্রু ভঙ্গিটা অনেক বেশি দামী সোনার চেয়ে ।।

(বরেণ্য সাহিত্যিক রমা-পদ চৌধুরীর একটি ছোটোগল্পের ছায়ায়)

- ২১ মার্চ, ২০১৫

|| আমার দুঃখ ||


বই পড়ে পড়ে রোজ কেমন শিখি বিনয়, 
বিদেশি সুগন্ধি সাবানের ফেনায় সারা অঙ্গ ধুয়ে মুছে নিই ।
বলতে শিখি, থামতে শিখি, কথার পিঠে কথা সাজাই,
মাথা উঁচু করে চলি আর পাহাড়ের কাছে
চুপচাপ নতজানু হই ।

আজও যে আমার আকাশের কাছে ভালোবাসা শেখা বাকি,
যে গাছকে রোজ ডাল ছেঁটে মাটি আলগা করে
যত্ন করে পরিষ্কার করে দিই, অঞ্জলি ভরে ছিটিয়ে দিই জল,
ভালো করে কাছে গিয়ে তাকিয়ে তো কোনোদিন দেখিনি
সে আমায় অন্য মানুষের চেয়ে কতো বেশি করে চেনে ! 

যে মুসলমান নিঃস্ব ছেলেটি
লুঙ্গি পরে খালি গায়ে রোদের দিনে
মাটির দাওয়ায় ছেঁড়া মাদুর পেতে দিলো আমায়,
গাছ থেকে কেটে এনে দিলো মিষ্টি জলের ডাব,
সন্ধ্যে হয়ে এলো যে হায়,
আমি কি করে দেখবো আর
তার সেই সরল শ্যামল মুখ ।

- ২৪ মার্চ, ২০১৫

|| পুরনো সেই দিনের কথা  ||


সে বয়সে টিউশনির কয়েকটা মোটে গোনাগুনতি টাকা থাকতো পকেটে । সেই কটা টাকায় খোশমেজাজে চলতো লাইটহাউস আর অনাদি কেবিন । গরমকালে উত্তর কোলকাতায় লাইন দিয়ে পাওয়া যেতো শিবলোকের স্বর্গসুধার মতো মাতাল করা সরবত। ফুরফুর করে প্রজাপতির মতো কারুকাজ করা পাখা মেলে উড়ে বেড়াতাম । দিনের প্রথম সূর্যের টকটকে আলো সারাদিন রাঙিয়ে রাখতো মন আর চাঁদনি রাতে
গঙ্গার মিষ্টি হাওয়া এসে জুড়িয়ে দিতো শরীর ।
পকেট খালি হয়ে গেলে চাকরি করা লোক দেখলে মনে খুব হিংসে হতো । ভাবতাম ও কেমন রোজ সেজেগুজে সুগন্ধি রুমাল পকেটে গুঁজে অফিসে যায় আর মাসকাবারে মুঠো মুঠো চকচকে টাকা পায় । এখন আমার সেই রঙিন বেকার জীবনকে খুব মনে পড়ে। মনে মনে সেই জীবনের রামধনু রঙ একমুঠো নিয়ে চোখেমুখে খুব মাখি আর গুনগুন করে বেসুরো গলায় নিজেকে শোনাই পুরনো সব দিন মনে করিয়ে দেওয়া সেই গান "আমি এতো যে তোমায় ভালবেসেছি ।"
পুরনো সেই দিনের কথা । সে কি ভোলা যায় ?
- ২৬ মার্চ, ২০১৫

|| তরী আমার ||


কেমন তুমি পালাও দেখি আমায় ফেলে
টর্চ জ্বেলেছে আকাশ দেখো খুঁজবে বলে ।
বনবাদাড়ে লুকিয়ে আছো ধানের ক্ষেতে
একলা যাবো আনতে তোমায় নিশুত রেতে ।
ডুবসাঁতারে খুঁজি তোমায় সারাটি দিন
পাখায় আমার জল বসে না হয়না মলিন, 
এবার আমি তোমার সাথে বাইবো শুধু জীবন ভরি
দুখের পালে চোখের জলে ভাসল সুখে আমার তরী ।।

- ২৯ মার্চ, ২০১৫


|| আজকের পরীক্ষা ||


ছেলের বৌ এর ট্রেনিং সেশন রান্নাঘরে ছিল
একটু আগে সরেজমিনে পরীক্ষাটা হোলো,
ডিমের ঝোলে কাত হয়েছি শিক্ষিকাকে বলি
নম্বরটা দিতেই হবে উপুড় করে থলি ।
সন্ধ্যাবেলা চা করাটা নয়কো তেমন শক্ত
ওই পেয়ালায় আমি হলুম চিরকালের ভক্ত
সাবধানেতে শিক্ষে দিও হচ্ছে বড়োই ভয়,
গুরু মারা বিদ্যে যেন কক্ষনো না হয় !

- ৩১ মার্চ, ২০১৫
----------------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Somnath Chakraborty in WaaS / March 2015

No comments: