"); -->

Sep 26, 2015

নন্দর কথা

|| নন্দর কথা ||


হঠাৎ কেন জানিনা আজ নন্দর কথা মনে পড়ছে । নন্দ ইংরেজি বলতে চাইতো, ভালোবাসতো - সেটা দোষের কিছু  তো নয়, আজকাল তো তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্ব বুক ফুলিয়ে এমন ইংরেজি বলে থাকেন লজ্জায় মুখ লুকোনোর জায়গা থাকে না। নন্দর চেষ্টার ত্রুটি ছিল না, তবু আমরা হাসতাম কারণ তখন মাঠে-ময়দানে এমন হাস্য রসাত্মক ইংরেজি যখন তখন শুনতে হতো না । 

যাই হোক, নন্দর সম্পর্কে নানান মজার ঘটনার কথা শুনতাম, সবটা যে বিশ্বাস করতাম এমনটা নয় । বিশ্বাস করতে হল খেলতে গিয়ে । সেটা ৭০ দশকের গোড়া । সিঁথির দিকে ক্রিকেট ম্যাচ খেলা, তখনো ওদিকের ভেতর দিকে তেমন জনবসতি গড়ে ওঠেনি, সেখানেই এক বিরাট খেলার মাঠ । প্রথমে ব্যাট করেছে স্থানীয় দল, রান তেমন করে নি, দুর্ভাগ্যক্রমে আমি ভালো বল করে পাঁচটা উইকেট পেয়েছি । লাঞ্চের ব্যবস্থা তারাই করেছে, আমরা গেস্ট বলে কথা ! খাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি, হঠাৎ একটি ছেলের উদয় । এসেই বলল, “বেল্টটা কোথায় রে ?” বুঝলাম ভালো বল করার ফল এবার পেতে হবে । আমার মুখের অবস্থা অনুধাবন করে যে আমাদের খেলাতে নিয়ে গিয়েছিল সে সজোরে হেসে উঠে বলল,”ভয় পেয়ে গেলি নাকি ? আরে ওই তো আমাদের দি গ্রেট নন্দ । এই নন্দ এদিকে আয়, কি চাইছিস ?” নন্দ উত্তেজিত হয়ে বলল, “আরে খেলা শুরু করতে হবে তো, বেল্টটা কোথায় গেল খুঁজে পাচ্ছি না ।” এবার বুঝলাম বেল্ট নয়, ও উইকেটের বেল খুঁজছে । খেলা শেষ হতে আমাদের এসে জড়িয়ে ধরল নন্দ আমরা জিতেছি বলে, বড় রাস্তার চায়ের দোকানে জোর করে আমাদের চা-বিস্কুট খাওয়াল । আমাদের সেই বন্ধুটি নন্দকে বলল, “এরা তো তোকে মিথ্যে বলবে না, ওদের জিগ্যেস কর সত্যি কি না ?” নন্দ আবার উত্তেজিত, “দাদা, সত্যি করে বলুন তো, সাহেবদের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা ইংরেজি বলতে পারে ? সত্যি করে বলবেন, ঐটুকু বাচ্চারা কখনো ইংরেজি বলতে পারে ? আমি জানি না বলে ওরা আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করে ।” উত্তর না দিয়ে সেদিন একটু হেসে পাশ কাটিয়েছিলাম, নন্দর সরল বিশ্বাসে সেদিন আঘাত করতে চাইনি । 

এবার বলি নন্দর ইংরেজির নমুনার কথা । বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় তখন । সন্ধ্যে হলেই সব অন্ধকার, রাস্তার বাতিতে ঠুলি লাগানো, বাড়ির সব দরজা-জানালা বন্ধ । নন্দ সিভিল ডিফেন্সের সক্রিয় কর্মী, উত্তরের আশায় জোর টর্চের আলো ফেলেছে, কিন্তু উল্টো দিক থেকে কেউ আলো জ্বালিয়ে প্রত্যুত্তর দেয়নি । নন্দ যথারীতি উত্তেজিত হয়ে পরের দিন অফিসে রিপোর্ট করে বলল, “সিঙ্গেল দিচ্ছি, সিঙ্গেল দিচ্ছি, বাট নো রিপোস, হাউ স্ট্রেন্থ !” আসলে নন্দর বক্তব্য ছিল “সিগন্যাল দিচ্ছি, সিগন্যাল দিচ্ছি বাট নো রেসপন্স, হাউ স্ট্রেঞ্জ !” 

এই হল নন্দ । পাড়ার খুব পুরনো প্রতিবেশী চলে যাচ্ছেন, ভদ্রলোকের লোকবল কম তাই পাড়ার ছেলেদের সাহায্য চেয়েছেন । নন্দ আর সকলের সংগে খুব খাটা খাটুনি করে ভদ্রলোকের মালপত্র লরিতে তুলে দিল। ভদ্রলোক খুব বিনীত ভাবে বললেন, “তোমরা আমার যা উপকার করলে আমি জীবনে ভুলবো না ।” নন্দ তার থেকেও বিনীত হয়ে আগ বাড়িয়ে বলে উঠলো, “কই আর তেমন কোএডুকেশন করতে পারলাম ?” ভদ্রলোকের চক্ষু চড়কগাছ, বলে কি ! আসলে নন্দ কোঅপারেশন বলতে চেয়েছিল । 

নন্দ এখন কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না । ভুল ইংরেজি শুনলেই আমার কেন জানিনা নন্দর মুখটা ভেসে ওঠে । নন্দ কি ইংরেজি বলা শিখতে পেরেছিল শেষ পর্যন্ত ?

------------------------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Siddhartha Chakraborty in WaaS / 26 September 2015

No comments: