---------------- সুদীপ রায় সংকলন – জুলাই, ২০১৫ ----------------
|| যাপন – ১ ||
সে কথাই থাক ...
রাত শেষ হলে ... তোমার ঠোঁটের ফাঁক
ভরে দিয়ে সোহাগ, আদরে
আমি ঠিক চলে যাব ।
ছোট খাট দুঃখ গুলো ভেসে যাবে মোহনার দিকে ।
দুরন্ত প্রেমিক আমি ... তবু
রাত্রির তুমুল প্রদাহে
কথা বলে যাব অনর্গল ।
সে কথাই থাক ...
তুমি থেকো সবুজ নিবিড়ে,
আমি এক নিদ্রাহীন নাবিকের মত
দিন রাত ... রব অচঞ্চল ।
- ২৯ জুন, ২০১৫
----------------------------------------------------------------------
|| যাপন – ২ ||
প্রহরে প্রহর ছুঁয়ে দ্বিপ্রহর হলে,
গর্জন গাছের বনে উড়লো চাবুক ।
ওখানে এখন শুয়ে নিটোল মেঘেরা,
প্রপাত ঘোলাটে হয়ে
হলুদ পাখীরা উড়ে যেই এলো ঘরে,
ভেঙে গেল বুক ।
এ এক অসুখ ... শোনো ... এ এক অসুখ ।
দিন ক্ষয়ে ক্ষয়ে দীন ক্ষীণ হয়ে এলে
জলের তলায় দ্যাখো ফুটল শালুক ।
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি
বিকেল গড়িয়ে দিন রাত্তির হলে
শার্সির কার্নিশে দেখি দ্রুত উড়ে এলো,
একডালিয়ার স্মৃতি ... সেই চেনা মুখ ।
এ এক অসুখ ... শোনো ... এ এক অসুখ ।
- ০১ জুলাই, ২০১৫
----------------------------------------------------------------------
|| যাপন – ৩ ||
তোমাকে জড়িয়ে আছি ...
তাই আজ দ্যাখো ভয় নেই আর ।
আগে দূরে দূরে ... তাই ভয় হতো
যদি ডুবে যাই ।
আজ আমি জলের গভীরে,
চারপাশে ট্র্যাঙ্কুইল চোখেরা ...
কে ডোবাবে বলতো আমায় ?
এই দ্যাখো সব কিছু ভুলে
নির্বিকল্প আমি ... এই দ্যাখো ...
নগ্নতা কত সহজেই এসে গেল ।
এবারে জিভের স্বাদ, চোখের ইশারা
উফফ ... আর কত কাল ...
এস এস ... ডাঁশা পেয়ারার মত
গন্ধ নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকি
আর মসলিনে ঢেকে দিই তোমার শরীর ।
- ০২ জুলাই, ২০১৫
--------------------------------------------------------------
|| যাপন - ৪ ||
ব্যাগে ভরা প্রশ্নচিহ্ন কিছু ... কিছু ধোঁয়া, কিছু চোঁয়া ...
অবেলায় মধ্যাহ্ন ভোজের পরে দু চারটি উদ্গার ।
বেলা পাঁচটায় কালো মেঘ, দলছুট চোঁ চাঁ দৌড় ..
মেট্রোর এ সি কোচ , অবশেষে চেনা সে খোঁয়াড় ।
এইভাবে দিন যায়, পিছু পিছু জমা হয়,শালিকের রোঁয়া ,
মনে পড়ে যায় ... পোষ্টাপিসের সেই স্খলিত আঁচল দিদিমণি ।
সিস্টোলিক লাফিয়ে একশ আশিতে ... ঘরে ফিরে ..
মরা চাঁদ দেয়ালেতে, হাওয়াটা বেআবরু ...সনসনি ।
ঈষদোষ্ণ ঈষদোষ্ণ ভালোবাসা মদিরার সাথে ..
বেশ ভাল লাগে গুরু আজকাল ।
আফসোস, কাল ফের থোড় , বড়ি , খাঁড়া ...
কে আছিস, ধুলো ঝেড়ে ঝাড়বাতি গুলো জ্বাল ।
- ০৩ জুলাই, ২০১৫
---------------------------------------------------------------------------------
|| বুড়োদিন ||
উটপাখির মত গলা বাড়িয়ে অপেক্ষায় ছিল বুড়ো দিন ...
গলার ঝোলাতে রাখা ছিল জেলুসিল, হজমোলা, ভাঙ্গা দূরবীন ।
কাঁধে রোঁয়া ওঠা , হলদেটে ছোপ ধরা ময়লা তোয়ালে ...
খোঁচা খোঁচা , কাঁচা পাকা দাড়ি কিছু ঝুলছে চোয়ালে ।
‘গুড মর্নিং স্যার’, ‘শুভ সকাল’ .. যেই বলা অমনি তুলকালাম,
সাঁই সাঁই ছুটল গুলি এদিক ওদিক দুম দাম ।
ঘুমন্ত প্রজাপতি পাখা মেলে দিল ফড় ফড় ...
শহরেতে ঝটিতি শুরু হয়ে গেল ধরপাকড় ।
ঠক ঠক .. দরজা খুলতে দেখি ... সারপ্রাইজ ... আই বাপ !
ব্লু জিন্স, সফেদ শার্টে বুড়ো দিন হাসিমুখে ছড়াল কলাপ ।
- ০৫ জুলাই, ২০১৫
---------------------------------------------------------------------
|| শেষকথা ||
সুতোর গোড়াটা খুঁজতে গিয়ে,
আকাশ হাতড়ে কি লাভ ?
তুমি যা বলছ তা তো শব্দব্রহ্ম নয় ।
মনে রেখো পেন্সিলের পেছনে যে ইরেজার থাকে,
তাতে থাকে কিছু পেন্ডুলাম গতি ...
তবু জেনে রেখো ...
সব ল্যাপাপোঁছা , সব ফাঁকি ... বাজারেতে
তুমি ক্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে একাকী ।
চাও কি চাও না সে টুকুরও গভীর কোথায় ?
চারপাশে হায়েনারা হামলে দাঁড়িয়ে,
খাল খিঁচে নেবে । হুঁ হুঁ বাবা,
নামাবলিটাও পাবে না গায়ে জড়াবার ।
সাগর যতই জড়িয়ে ধর তুমি,
গায়ে জল দিতে,
আমার পুকুরে আসতেই হবে ।
কেউ ঘাট দেবে না তোমায় ।
বাবুদের পুকুরেতে আজকাল, কচুরি পানায় হিজিবিজি ...
নামা দায় ... সম্ভবত !
- ০৬ জুলাই, ২০১৫
---------------------------------------------------------------------
|| যাপন – ৫ ||
প্রতিটি দিনের আমি খোলস ছাড়াই ।
রাত হলে ... খয়েরী যখন সব নিরাকার ...
প্রতিটি গাছের বুকে দীর্ঘশ্বাস জমা হয়ে যায় ।
ভেবে দ্যাখো ...
সারি দিয়ে ছায়ারা যখন দীর্ঘতর হলো,
চোখের একোণ ওকোণ তখন
আয়েশেতে আড়মোড়া ভাঙ্গে ...
তারপর একদিন জল ভেঙ্গে যায় ।
নগ্ন দিনেরা যেন একেকটি সুখী মহীরুহ,
অত গাছ, অতশত গাছের খোলস,
এলোমেলো চুল উড়ে গিয়ে রাত ভোর হয় ।
তখন বেহুঁশ হাওয়ারা চলে আসে
সার বেঁধে ... আর ...
গাছেরা ঘুমায় ।
- ০৭ জুলাই, ২০১৫
---------------------------------------------------------------------
|| অস্তরাগে ||
কাগজ কলম নিয়ে,
আজ বসেছি আঁকবো ছবি স্মৃতির আঁচড় দিয়ে ।
লিখব কি তা ভাবি,
অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে ... আর খুঁজে কি পাবি ?
গুছিয়ে সেসব লেখা,
এই বয়েসে নতুন করে যায় কি সেসব শেখা !
স্মৃতির পথের পাশে,
হারিয়ে যাওয়া মুখগুলো সব ভিড় করে যে আসে ।
আজ কতজন নেই,
তাদের কথাই পড়ছে মনে, ভুলছি লেখার খেই ।
যখন ভীষণ একা,
তখন শুধুই পেছন ফিরে জীবনটাকে দেখা ।
সেই জীবনের স্মৃতি,
কখনো তা বিষাদ ভরা, কখনো প্রেম প্রীতি ।
জীবন তবুও চলে,
দুঃখ ভোলায় বন্ধুরা সব, আশার প্রদীপ জ্বলে ।
জীবন তো নয় স্থির,
পুরনো মুখ হারিয়ে আসে নতুন মুখের ভিড় ।
ষাট, সত্তর, আশি,
জীবন খেয়ার শেষ বেলাতে সঙ্গী কান্না-হাসি ।
জীবন নদীর বুকে,
কান্না ভুলে হাসছি ... যখন দুঃখ ভোলায় সুখে ।
এমনি করেই যেন,
দুখের মাঝে সুখ সে হাসে, দুঃখ পাবো কেন ?
জীবন রেলের গাড়ী,
থামলে ... যেন হাসিমুখেই বিদায় নিতে পারি ।
- ১৬ জুলাই, ২০১৫
---------------------------------------------------------------------
|| কবি ||
কবি তিনি,
শব্দের সমুদ্র থেকে নিঃশব্দে তোলেন,
অনির্বাণ দিব্যদ্যুতি।
অনুভূতি উজ্জ্বল আলোকে রূপরেখা পায়,
কায়কল্প তাতে দেন যিনি,
কবি তিনিই ।
কবি তিনিই,
স্থিতধী এবং স্বতন্ত্র পুরুষ ।
সৃষ্টির আনন্দে মগ্ন,
দিন যায়, রাত যায়, কেটে যায় বহু যুগ,
চিরন্তন সময়ের মুখোমুখি ...
নেই হুঁশ ।
লক্ষ্য তবু স্থির ... এমনই প্রতিজ্ঞ যিনি,
কবি তিনিই ।
এক হাতে লেখনীর অসি,
অন্য হাতে কল্পনার ফানুস ।
হাসি কান্নায় নির্বিকল্প যে মানুষ,
যার চোখ স্বপ্নিল শব্দের আলোকে ...
শব্দ-ব্রহ্ম যার উৎসারিত বাণী,
কবি তিনি ।
- ১৭ জুলাই, ২০১৫
---------------------------------------------------------------------
|| ঈশ্বরের বাগান ||
এ ঘর থেকে ওঘরের দূরত্ব কতখানি ?
একটা দেওয়াল, নাকি একযুগ ?
নাকি এভাবেই জিওমেট্রিক কিছু দেখে,
পিকাসোর ছবি নেড়েচেড়ে,
মন আমার অর্ধেক ভাবুক ?
আজকাল স্বর্গীয় সমুদ্রে ভাসে রেবাদি’র মুখ,
ঠোঁটের কোনাতে জমা ভালবাসা,
অথবা শালুক ... অথবা ...
উফ ... আর কি চাই বলো তো ?
কোদাল, খুরপি, ইউরিয়া আঁচড়ে মন মাতাল ।
কাল রাত থেকে বসে আছি ল্যাপটপ কোলে
ঈশ্বরের বাগানে ... বেসামাল ।
- ১৮ জুলাই, ২০১৫
---------------------------------------------------------------------
|| নারী ||
সে'এক সময় এসেছিল ।
শয়নে, স্বপনে ছিল, ছিল নিশি জাগরণে
দিনে, রাতে চারিপাশে ছিল
নারী, নারী, নারী ।
আজ পিছু ফিরে দেখি সেই দিন,
ছায়া অবয়বে ঢাকা সেই সব মুখ,
সেই সব বিষণ্ণ মুখেরা ...
ঘন কুয়াশায় আবছা আদল যেন তারই ।
যে আমি ভোগের লোভে পথ হেঁটে গেছি
আজ সেই পথ আগাছায় ঢাকা ।
এস নারী ... দেখি
আরও একবার যদি ছুঁতে পারি !
- ২১ জুলাই, ২০১৫
---------------------------------------------------------------------
|| তোর চোখেতে ||
তোর চোখেতে আকাশ দেখে
উড়ল আমার মন ।
পাহাড়, সাগর পেরিয়ে এলাম
সবুজ গহীন বন ।
দিনের শেষের ক্লান্ত বাতাস
কপালে দেয় ছোঁয়া ।
স্মৃতির প্রলেপ ঝর্ণাধারায়
শীতল পরশ ধোয়া ।
মনকে যখন আয়না দেখি
দেখি স্মৃতির মুখ ।
সেই স্মৃতিকে লুকিয়ে রাখি
তাতেই আমার সুখ ।
তোর চোখেতে আগুন দেখে
পুড়ল আমার মন ।
মনকে আমার আকুল করে
না জানি সে কোন ।
এমন মনের গহীন সে পথ
রাখি নি তার খোঁজ ।
তার স্মৃতিকে বুকে ধরেই
দিন কাটে মোর রোজ ।
তোর দুটি চোখ মেঘলা দেখে
ভিজল আমার মন ।
ঝর ঝর ঝর বৃষ্টি ঝরে
আজ তাই সারাখন ।
এমন এ দিনে মন চায় তাই
তোকেই আমার পাশে ।
দেখবি কেমন মেঘ সরে গিয়ে
সূর্য আবার হাসে ।
- ২৬ জুলাই, ২০১৫
----------------------------------------------------------------------------------------
Contributed by: Sudip Roy in WaaS / July 2015
No comments:
Post a Comment